আস্ সালামু ওয়ালাইকুম,

কেমন আছেন বন্ধুরা সবাই? আশাকরি ভালোই আছেন। আজ আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করব ডার্ক ওয়েব নিয়ে। অনেকের কাছেই পরিচিত শব্দ। কিন্তু আসলে এটা কি, কি করা হয় এটা দিয়ে, কিভাবে এক্সেস করতে হয় সেটাই আলোচনা করব। দুই খন্ডেই শেষ করব আশা করি। আশাকরি ভালোকিছু উপহার দিতে পারব। তো চলুন……

সম্পূর্ণ ইন্টারনেটকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।  সবাইকে আমার পার্সোনাল সাইট tech4bd.com এ ভিজিট করার অনুরোধ করলাম

১. সার্ফেস ওয়েব (Surface Web)

২. ডীপ ওয়েব (Deep Web)

৩. ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

সার্ফেস ওয়েব (Surface Web): আমাদের নজরে আসা ইন্টারনেটের জগতকেই মূলত সার্ফেস ওয়েব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই যে, আপনারা গুগলে কিংবা বিভিন্ন সাধারন সার্চ ইঞ্জিন ব্যাবহার করে তথ্য পাচ্ছেন তা সকল গুলোই সার্ফেস ওয়েব এর অন্তর্ভুক্ত। এমনি ভাবে আপনার প্রতিদিনের নিউজ আপডেট সাইট গুলো, প্রযুক্তি সাইট গুলো, গান ডাউনলোড সাইট গুলো ইত্যাদি সবাই সার্ফেস ওয়েবের অংশ। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, এই সার্ফেস ওয়েব সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের মাত্র ৫% জুড়ে রয়েছে?

ডীপ ওয়েব (Deep Web): একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের প্রায় ৯৫% অংশ হলো এই ডীপ ওয়েব। এখন এই ডীপ ওয়েবে কি কি সংরক্ষিত রয়েছে সে বিষয়ে প্রথমে জেনে নেয়া যাক। দেখুন, আপনার যতো অনলাইন স্টোরেজ রয়েছে যেখানে আপনার সকল ডাটা স্টোর করা রয়েছে। যেমন কথা বলি গুগল ড্রাইভ নিয়ে বা ড্রপ বক্স নিয়ে। আবার বড় বড় ইউনিভার্সিটিতে যতোগুলো গবেষণা তথ্য বা গোপন তথ্য স্টোর করা রয়েছে বা ব্যাংক এর যতো গুলো তথ্য বা ডাটাবেজ রয়েছে অথবা সরকারের যে গোপন প্রজেক্ট গুলো সংরক্ষিত রয়েছে তো এই সবই হলো ডীপ ওয়েবের অংশ। অর্থাৎ বাংলা ভাষায় বলতে যে তথ্য গুলো আপনি গুগল সার্চ করে কখনোও খুঁজে পাবেন না সেটিই হলো ডীপ ওয়েব। ডার্ক ওয়েব মূলত ডিপ ওয়েবের একটি অংশ। ডীপ ওয়েব থেকে আপনি যদি কোন তথ্য অ্যাক্সেস করতে চান তবে আপনার প্রয়োজন পরবে একটি ওয়েব অ্যাড্রেস। এবং ওই নির্দিষ্ট ওয়েব অ্যাড্রেসে প্রবেশের জন্য আপনাকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি গ্রহন করার জন্য আপনাকে হয়তো কোন লগইন আইডি বা পাসওয়ার্ড প্রবেশ করাতে হতে পারে অথবা সেটি যেকোনো ধরনের অথেন্টিকেশন হতে পারে। কিন্তু আপনি বিশেষ ওয়েব অ্যাড্রেস ছাড়া কখনই ডীপ ওয়েবে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেননা ডীপ ওয়েবের কোন তথ্যই গুগল বা যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করা থাকে না। তো আপনি যতই সার্চ করতে থাকুন না কেন, আমার গুগল ড্রাইভে কি সেভ করা আছে তা আপনি কখনই খুঁজে এবং অ্যাক্সেস করতে পারবেন না।

ডার্ক ওয়েবঃ ইন্টারনেটের আরো একটি কালো অধ্যায় আছে যা সবার কাছে লুকায়িত হয়ে থাকে, তার নাম হলো ডার্ক ওয়েব বা ইন্টারনেটের কলঙ্কিত অংশ। কিন্তু আমি শুরু করার আগে আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই যে এই ডার্ক ওয়েব সম্পূর্ণ অবৈধ ইন্টারনেট। ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করার চেষ্টা না করাই ভালো। এবার চলুন ডার্ক ওয়েব নিয়ে সামনে এগোনো যাক। ডার্কনেট মূলত গঠন করা হয়েছে ছোট ছোট ফ্রেন্ড টু ফ্রেন্ড, পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে। এর পাশাপাশি বড় নেটওয়ার্কও বিদ্যমান যেমন টর, ফ্রিনেট এবং আই২পি যা সরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দ্বারা পরিচালনা করা হয়ে থাকে। টর হচ্ছে টর প্রজেক্টের একটি ব্রাউজার যার মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা যায়। আর এর ডোমেইনের এক্সটেনশন হয় .onion(যেমন .com, .info, .org ইত্যাদি)। আরেকটি হচ্ছে I2P(Invisible Internet Project) এর মাধ্যমেও ডার্ক ওয়েব এক্সেস করা যায়।

বন্ধুরা ডার্ক ওয়েবে মনে করুন যা ইচ্ছা তাই করা সম্ভব। ডার্ক ওয়েবে ড্রাগস ডিলিং, আর্মস ডিলিং, হ্যাকিং, ফ্রড, পর্ণগ্রাফি, স্ক্যাম, টেররিজম সহ এমন এমন অসংখ্য অবৈধ কাজ সম্পন্ন করা হয় যার সম্পর্কে আজ এই পোস্টে বলা সম্ভব নয়। ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের সেই কালো অধ্যায় যেখানে যেকোনো কিছু যেকোনো সময় করা সম্ভব। ডার্ক ওয়েবও কিন্তু সাধারন গুগল সার্চ করে কখনো খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। যদি আপনি ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করতে চান তবে আপনার প্রয়োজন পড়বে একটি বিশেষ ইন্টারনেট ব্রাউজার। যা ইন্টারনেটে টর (TOR) ব্রাউজার হিসেবে পরিচিত। এবং আপনি যদি এই টর ব্রাউজার ব্যবহার করেন তবেই ডার্ক ওয়েবে যেকোনো কিছু অ্যাক্সেস করতে পারবেন। টর ব্রাউজারটি ভিপিএন হিসেবে কাজ করে। টর ব্রাউজার আপনার অ্যাড্রেসকে অনেক অনেক আইপি লোকেশনে বাউঞ্জ করিয়ে তবেই কাঙ্ক্ষিত ওয়েব অ্যাড্রেসে পৌঁছে দেয়। আপনার গন্তব্যে যে ইউজার থাকে সেই শুধু আপনাকে ট্রেস করতে পারে। তাছাড়া এমনি যে কেউ আপনাকে ট্রেস করতে পারবে না। কিন্তু আবার বলে রাখছি এটি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অবৈধ। সকল প্রকারের ব্লাক মার্কেট অবস্থান করে ডার্ক ওয়েবে।  টর প্রথম প্রথম আবিষ্কার হয়েছিলো ইউএস নেভির জন্য। কিন্তু এটি বর্তমানে একদম ওপেন একটি বিষয় হয়ে গিয়েছে। গোটা ইন্টারনেট জগতে জালের মতো ছড়িয়ে আছে এই ডার্ক ওয়েব। একে নিয়ন্ত্রন করা অনেক মুশকিল ব্যাপার। সরকার ডার্ক ওয়েব ধিরেধিরে বন্ধ করছে। কিন্তু এখনো ডার্ক ওয়েবের অস্তিত্ব রয়েছে। টর ব্রাউজার আপনি ভিপিএন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং এটির মাধ্যমে সার্ফেস ওয়েব ও ডীপ ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারেন। কিন্তু ভুলেও ডার্ক ওয়েবের দিকে পা বাড়াবেন না। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের আড্রেসগুলো এমন যে আপনি মনে রাখতে পারবেন না। যেমনঃ http://2jv5rmgnmze5l6i4.onion

আর সবাইকে আমার পার্সোনাল সাইট tech4bd.com এ ভিজিট করার অনুরোধ করলাম। এবং ফ্যানপেজ fb.com/techfunbd তে একটা লাইক দিবেন প্লিজ।

পরের পোস্ট এ আমি কিভাবে ডার্ক ওয়েবে এক্সেস করবেন সেটা দেখাবো এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়। আশাকরি সাথেই থাকবেন।

বি. দ্র. অনুগ্রহ করে কষ্ট করে বানানো জিনিস কেউ কপি পেস্ট করবেন না। আর আপনারা প্লিজ কমেন্ট করুন এবং আপনাদের মতামত জানান। আপনাদের মতামত আমাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আপনাদের ভালো লেগেছে কিনা জানাবেন………
সবাইকে ধন্যবাদ।