নিজেকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে, অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পরিধানের পোশাকটি পরিপাটি আছে কিনা। কারণ পোশাক সুন্দর করে গুছিয়ে না পরলে পোশাকের সৌন্দর্য পরিপূর্ণতা পায় না।তাছাড়া, নিখুঁত পোশাক পরলে মনও প্রফুল্ল থাকে! আর তাই আমি আমার শখের কেনা পোশাকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ইস্ত্রি ব্যবহার করি। কিন্তু এই সহজ কাজটি অনেকেই জটিল করে ফেলে কিছু সহজ পদ্ধতি না জানার কারনে। ইস্ত্রি করার পদ্ধতি পরিবর্তন করা কাপড়ের উপর নির্ভর করে। একেক ধরনের কাপড় ইস্ত্রি করতে হয় একেকভাবে।

আপনি কি সঠিক এবং সহজ উপায়ে কাপড় আয়রন করার উপায়গুলি জানতে চান ?  

তাহলে, আর দেরি কেন? চলুন দেখে নেয়া যাক কাপড় আয়রন করার সঠিক এবং সহজ পদ্ধতিগুলো-

          কাপড় আয়রন করার আগে সর্বপ্রথম আমি যে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখি তা হলো সুতি, সিল্ক, জর্জেট, লিনেন, অর্থাৎ কোন ধরনের কাপড় আমি আয়রন করবো। তারপর পোশাকের একটি তালিকা তৈরী করি আয়রনের তাপমাত্রা অনুযায়ী। সিল্ক এবং সিনথেটিক কাপড় নিন্ম ও মাঝারি তাপমাত্রায় (প্রায় ৩৫০ ফারেনহাইট) । পশমি কাপড় মাঝারি থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় এবং সুতি কাপড় উচ্চ তাপমাত্রায় ৪০০ থেকে ৪২৫ ফারেনহাইট আয়রন করা ভালো।

          যেহেতু সঠিক তাপমাত্রা ঠিক করা কঠিন কাজ। তাই তাপমাত্রা পরিবর্তন করার পর আমি কয়েক মিনিটের জন্য আয়রন মেশিনটি রেখে দেই। কাপড়ের ধরন বুঝে আয়রনের তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়। সাধারণত আয়রনের গায়েই কাপড়ের ধরন অনুযায়ী কত তাপমাত্রা প্রয়োজন তা লেখা থাকে।

          অ্যারারুট কিংবা মাড় দেয়া কাপড় পানি ছিটিয়ে ইস্ত্রি করে নেই যেন কাপড় পুড়ে অথবা ফেঁসে না যায়। ভালো এবং পরিপাটি আয়রনের জন্য প্রথমে কাপড়টিতে হাল্কা পানি ছিটিয়ে দিতে হয় ।

          পশমী কাপড় আয়রন করার সময় কাপড়ের ওপর ভেজা গামছা রেখে আয়রন করতে হয়। ব্লাউজ বা শার্ট আয়রন করার সময় প্রথমে ব্লাউজ বা শার্টের হাতাগুলো আয়রন করে নেই। ব্লক, হ্যান্ডপেইন্ট বা স্ক্রিনপ্রিন্ট করা কাপড় উল্টে ইস্ত্রি করি, যেন এর রং নষ্ট হয়ে না যায়।

          শার্ট বা ব্লাউজ ইস্ত্রি করার সময় প্রথমে কলার ও হাতা ইস্ত্রি করে নেই তারপর বাকিটুকু ইস্ত্রি করি।কুশন এবং টেবিল ম্যাট উল্টো করে ইস্ত্রি করি যেন এর ডিজাইনের কোনো ক্ষতি না হয়।

          আমার ঘরের পর্দা বা টেবিলকভার আয়রন করার সময় আমি পাশে ২টি চেয়ার বসিয়ে দেই, যাতে কাপড়গুলোতে আয়রন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভাঁজ না পরে। টেবিলে তোয়ালে বিছিয়ে দেই যেন ইস্ত্রির গরমে আয়রন করার টেবিলটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

          আমি আয়রন সংবেদনশীল কাপড়ের ওপরে পরিষ্কার ছোট সুতি কাপড়, রুমাল বা গামছা দিয়ে আয়রন করি। এবং আয়রন করার সময় কাপড়ের উল্টো পাশে ইস্ত্রি করি যেন কাপড় ঝলসে না যায়। শার্টিন বা ক্রেপজাতীয় কাপড় সবসময় আরেকটি ভেজা কাপড়ের ভাঁজের মাঝে রেখে ইস্ত্রি করলে কাপড়ের কোনো ক্ষতি হয়না।

          গোল করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কখনোই আয়রন করা ঠিক না। এতে কাপড়ের মধ্যে টান লাগতে পারে। আর লম্বালম্বিভাবে আয়রন করলে কাপড়ের ভাঁজ দূর করে।

          কাপড়ের শুরু থেকে শেষ, বাইরে থেকে ভেতরে এভাবে আয়রন করলে খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি আয়রন করা যায়। আমি যে জায়গায়ই  কাপড় রেখে আয়রন করি না কেন, তা যেন একটু শক্ত ধাঁচের হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখি। যারা বিছানার ওপর কাপড় আয়রন করেন তারা অবশ্যই বিছানার চাদরের ওপর মোটা কাপড় বিছিয়ে তারপর আয়রন করবেন। এতে করে আয়রন, কাপড় ও বিছানার কোনো রকম ক্ষতি করতে পারবেনা।

          আমি সবসময় লোহার আয়রনের সঙ্গে একটা মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করি। কারণ কম ওজনের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার না করাই ভাল। এতে আয়রন খুব গরম হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি সঠিক মাপের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করছেন।

          আয়রন করার পর পরই কাপড় ভাঁজ করে আমি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখি কারণ ইস্ত্রি করে সরাসরি আলমারিতে কাপড় রাখলে এর স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়। সবশেষে আমি আলমারিতে গুছিয়ে রাখি যেন যার যার প্রয়োজনে সে সহজেই পেয়ে যায়।

          আমার বাবার বডি স্প্রে বা পারফিউম সরাসরি গায়ে ব্যবহার করলে এলার্জির সমস্যা হয়, তাই আমি কাপড় আয়রন করার সময় কাপড়ের উপর একটু পারফিউম ছিটিয়ে নেই। এতে ঐ সুগন্ধ অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে এবং এতে করে, গায়ে সরাসরি পারফিউম ব্যবহার করতে হয়না।

          আমার ব্যবহৃত আয়রোনটির তলায় লোহার পাত বসানো তাই এটা পরিষ্কার করার জন্য আমি গরম ইস্ত্রিতে মোম ঘষে নেই। এছাড়া মাঝে মাঝে আমি গরম ইস্ত্রির প্লেটে সামান্য প্যারাফিন বা অলিভ অয়েলও মাখিয়ে নেই। ইস্ত্রি পরিষ্কার থাকলে কাপড়ে দাগ পড়বে না। কাপড় সমতল জায়গায় ইস্ত্রি করতে হয়।

আমি সবসময় আমার পরিবারের শখের জামাকাপড় গুলো যত্ন করে অতি সাবধানে রাখার চেষ্ঠা করি। কিন্তু তারপরও সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা অনেক সময়ই দুর্ঘটনাবশত কাপড় নষ্ট করে ফেলি। আমরা কম-বেশি সবাই আয়রন করতে পারি কিন্তু তা কতটুকু সঠিকভাবে করি তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? তাই আমাদের উচিত সঠিক পদ্ধতি মেনে কাপড় আয়রন করা।