স্বাগতম মাহে রমজান, খোশ আমদেদ রমজান মুবারক। ইসলাম ও মুসলিম উন্মাহ্র জন্য এ মাস
অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্যের অধিকারী। মহান আল্লাহ্র নিকট দিন, ক্ষণ, মাস ও তারিখের মর্যাদা
সমান হলেও কিছুকিছু বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ফলে সেগুলোর মর্যাদা আমাদের পারিবারিক
ও সামাজিক জীবনে বেড়ে যায়। এরই একটি উল্লেখযোগ্য মাস হচ্ছে রমজান মুবারকের মাস। এ
মাস মহিমানি¦ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এ মাসের কদরের রাতে
বিশ্বমানবতার মুক্তি সনদ আল-কুরআন নাযিল করেছেন। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সালমান ফারেসী (রা.)
বলেন, নবী করীম (স.) শাবান মাসের শেষ তারিখে সকল সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে
বলেন, তোমাদের ওপর শীঘ্রই এমন এক বরকতপূর্ণ ও মহিমানি¦ত মাস ছায়া বিস্তার করতে যাচ্ছে
যার মধ্যে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যম-িত রাত রয়েছে। ফযীলত, রহমত ও বরকতের দিক থেকে এ রাত হাজার
মাসের চেয়েও উত্তম।
আল্লাহ্ তাআলা এ মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাত
জেগে তাঁর ইবাদত করাকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে রাত জেগে কোন সুন্নত বা নফল ইবাদত
করবে তাকে অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন ফরজ
ইবাদত করবে তাকে অন্য মাসে আদায়কৃত সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে। রমজানের
এ মাস সবর, ধৈর্য, ত্যাগ ও তিতিক্ষা এবং সংযম সাধনের মাস। যার প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। এ
মাস সৌহাদ্র্য ও সহমর্মিতার মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ মাসে যে
ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে প্রতিদান স্বরূপ তার গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে
জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে। আর তাকে আসল রোজাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে এবং এ
জন্য আসল রোজাদারের সওয়াব প্রাপ্তিতে কোন ঘাটতি হবে না। এ পর্যায়ে কোন কোন সাহাবা
আরজ করলেন, ইয়ারাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে অনেকেই রোজাদারকে ইফতার করানোর ক্ষমতা রাখেন না।
তাদের কী হবে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে একটি খেজুর, অল্প একটু দুধ কিংবা
নিদেন পক্ষে একটু পানি দিয়ে ইফতার করাবে তাকেও আল্লাহ্ তা’আলা সমপরিমাণ সওয়াবই
দিবেন আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পেটভরে আহার করাবেন আল্লাহ তাকে হাউজে কাওসার হতে
এমন পানীয় পান করাবেন যার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত সে আর পিপাসিত হবে না।
এ মাস এমন একটি মাস যার প্রথম দশদিন রহমতের দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ দশদিন
জাহান্নাম হতে মুক্তির। আর যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধীনস্ত কর্মচারীদের কাজের বোঝা বা চাপ
কমিয়ে দিবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি দিবেন।
রামজান মাসকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নবী করীম (স.)-এর এই ঐতিহাসিক মূল্যবান ভাষণে রমাজান
মাসকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাস বলে ঘোষণা করা হয়েছে যার প্রাতিধ্বনি আলকুরআনেও
পাওয়া যায়। বলা হয়েছে, “রমজান মাস এমন একটি মাস যাতে আলকুরআন নাযিল হয়েছে।”
(আলকুরআন ২: ১৮৫) বর্ণিত আয়াত হতে বুঝা যায় এ মাস মহিমানি¦ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে
এ মাসে আলকুরআন নাযিল হওয়া। তাছাড়া এ মাসে অন্যান্য আসমানী কি তাবসমূহও নাযিল

হয়েছিল। যেমন রমজান মাসের প্রথম রাতে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ওপর সহীফাসমূহ নাযিল হয়েছিল।
রমজান মাসের ছয় তারিখে হযরত মুসা (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়েছিল তওরাত এবং তের রমজানে হযরত
ঈসা (আ.) এর ওপর নাযিল হয়েছিল ইন্জীল। (মুসনাদে আহমদ, তাবারাণী)
প্রকৃত পক্ষে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আলকুরআন শুধুমাত্র নিছক কিছু উপদেশ সম্বলিত ধর্মগ্রন্থ
নয়। বরং এটি বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তি সনদ। একে বাস্তবভাবে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারণ
করতে হলে বছরে অন্তত একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অনুশীলন প্রয়োজন। তাই আল্লাহ্
তাআলা রমজানের এ মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা আমাদের ওপর ফরজ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, “যে ব্যক্তি এ
মাসটি (রমজান) পাবে সে যেন অবশ্যই এ মাসে রোজা পালন করে। (আলকুরআন ২:১৮৫)
হযরত সালমান ফারেসী (রা.) বর্ণিত হাদীসে রমজান মাস মহিমানি¦ত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম
কারণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে ‘উত্তম’
আর সে রাত হচ্ছে রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোন রাত বিশেষত: বেজোড় রাত। যার নাম লাইলাতুল
কদর বা কদরের রাত। কেননা এ রাতেই আল্লাহ্ তাআলা আলকুরআন নাযিল করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে,
“নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) এ রাতে আলকুরআন নাযিল করেছি। (হেনবী:) তোমাকে কিসে জানাবে
লাইলাতুল কদর কী? কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা বিশেষত: জিব্রাইল
(আ.) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সফল কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অতএব আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে রমজানের পূর্ণাঙ্গ হক পালন করার তাওফীক দান করুন, আমীন।