ইদানীং আমাদের দেশে একটা প্রচারণা নিয়ে বেশ আলোচনা শোনা যায়। সেটা হল “চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দিবো” শীর্ষক এই প্রচারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই সফলতার মূখও দেখছেন। কিন্তু চাকরি না খুঁজে উল্টো চাকরি দেওয়া কি সহজ? প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না, যতটা সহজ শোনায় ব্যাপারটা ততটা সহজ নয়। তবে, খুব কঠিনও নয়। ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে অনেক কিছুই এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। তথ্য ও প্রযুক্তি এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। এই সহজ দুনিয়া থেকে আয় করার আছে কিছু সহজ উপায়ও আছে।

ইউটিউব

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম অর্থ আয়ের এক বড় উপায়। বিশেষ করে ইউটিউব। রান্না শেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যার সহজ সমাধান কিংবা ছোট নাটক, মজার ভিডিও তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় খুব বেশি কঠিন নয়। এর কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব, যারা কন্টেন্ট তৈরি করেন, তাদের সঙ্গে আয়ের একটা অংশ শেয়ার করে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কয়েকজন তরুণ এই পথে গিয়ে ভালে করছেন। চাইলে আপনিও ইউটিউবার হবার চেষ্টা করতে পারেন। এজন্য দরকার ক্রিয়েটিভ কিছু আইডিয়া, ভিডিও করার উপকরণ এবং অবশ্যই ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা।

সোশ্যাল মিডিয়া

ফেসবুক বা টুইটার অবশ্য যারা কন্টেন্ট তৈরি করেন তাদের এখনো সরাসরি কোনে অর্থ দেয় না। তবে এক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনের উপায় একটু ভিন্ন হতে পারে। আপনি চাইলে কোনে ব্র্যান্ডের ফেসবুক বা টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘ম্যানেজ’ করতে পারেন। মূল কাজ হবে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার করে সেই পণ্যের প্রসার বাড়ানো। এজন্য পণ্য ব্যবহারকারীর সঙ্গে একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে ফেসবুক বা টুইটারে। এই কাজে প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি ভাষার দক্ষতাও থাকতে হবে। বিশেষ করে ভালে ইংরেজি জানা থাকলে কাজের পরিধি অনেক বাড়বে।

ঘরে বসেই কাজ করুন

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আয়ের দিক থেকেও খুব বেশি পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম। এক্ষেত্রে সহায়তা করছে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্তপেশাজীবীদের কাজ দেয় এমন কিছু ওয়েবসাইট। এইসব ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধনের পর নিজের যোগ্যতা গুলো সেখানে দিতে হবে। এরপর আপনি যা জানেন, সেটা হতে পারে ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, এসইও কিংবা লেখালেখি। এই সমস্ত কাজ গুলো পেলে করতে থাকুন। প্রথমদিকে একটু অল্প টাকায় করে দিতে পারেন। তবে কাজ ভাল করলে এইসব ওয়েবসাইটে রেটিংয়ে আপনার অবস্থা ভাল হবে। আর রেটিং যত ভাল, পরিবর্তীতে কাজ পাওয়া ততই সহজ। একসময় চাইলে নিজে ছোটখাট একটা কোম্পানি গড়ে অন্যদেরও কাজ, অর্থাৎ চাকরি দিতে পারবেন।

গুগল থেকে অর্থ আয়

বিষয়ভিত্তিক ওয়েবসাইট থেকে অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে এক বড় উৎস হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স। আপনার ওয়েবসাইটটি যদি জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয় এবং গুগলের নিয়মকানুন মেনে পরিচালনা করা হয়, তাহলে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন পেতে পারেন। তবে সমস্যা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষা গুগলের এই সেবায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি, যদিও কয়েকটি বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে এই সমস্ত সাইটে গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার পর বাংলা কন্টেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিষয়ভিত্তিক ব্লগাররা গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ভালে অর্থ উপার্জন করেন, যা তাদের জন্য জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস।

ইন্টারনেটে অর্থ আয় সহজ হলেও এখনো বেশ কিছু বাধা রয়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পেপ্যাল সেবা এখনো চালু হয়নি। ইন্টারনেটে উপার্জিত অর্থ সহজে দেশের অ্যাকাউন্টে জমা করা যাচ্ছে না বলে মাঝে মাঝে মুক্ত পেশাজীবীরা অভিযোগ করেন। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, উচ্চগতির ইন্টারনেট এখনো সব জায়গায় সহজলভ্য হয়নি। এইসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিভিন্ন বিষয়ে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে বাংলাদেশে বসে থেকে অর্থ আয় করে বেকারত্ব ঘুচাতে পারবেন আরো অনেকেই।

আপনার কি কিছু বলার বা জানার আছে? যদি থাকে তাহলে নীচের মন্তব্যের ঘরে লিখুন।