টিভি এখন আর টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখার যন্ত্র নয়। ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে ইউটিউব, ফেসবুক, নেটফ্লিক্স—ইচ্ছেমতো দেখার সুবিধা দেয় আজকালকার টিভিগুলো। এসব টিভি পরিচিত স্মার্ট টিভি নামে। স্মার্ট টিভি নিয়ে এবারের বিশেষ আয়োজন।
‘স্মার্ট’ এখন আলোচিত শব্দগুলোর মধ্যে অন্যতম। চটপটে বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ যন্ত্রগুলোকে স্মার্ট ডিভাইস বলা হয়। বোতাম টিপে দূরালাপনীর যন্ত্রটিও এখন স্মার্ট। বদলে গেছে বাসার টেলিভিশনও। টিভি এখন শুধু টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখার উপলক্ষ নয়। ইন্টারনেটের যুগে ই–মেইল চেক করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুঁ মারা, দেশের হালচাল জানা, সংবাদ পড়াসহ সব কাজের জন্য এখন এই একটি বাক্সই যথেষ্ট। যেসব টিভি ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত করা যায়, সেসবই স্মার্ট টিভি।
SAMSUNG টিভি
SAMSUNG দেশের বাজারে ২০১৮ সালের নভেম্বরের শেষে বেশ কয়েকটি স্মার্ট টিভি এনেছে। গত বছর আসা এন সিরিজের টিভিগুলো ৩২ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৬৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে ফরমাশ দিলে ৮৫ ইঞ্চির টিভিও SAMSUNG সরবরবাহ করে।
স্যামসাং ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা খন্দকার আশিক ইকবাল বলেন, স্যামসাংয়ের শুধু টিভি নয়, রিমোট কন্ট্রোলারটিও স্মার্ট। কিউএলইডি টিভিতে যে রিমোট কন্ট্রোলারটি থাকে, তাতে তিন-চারটি বোতাম রয়েছে। তা দিয়েই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রয়েছে ইনভিজিবল কেব্ল ম্যানেজমেন্ট। টিভির সঙ্গে অতিরিক্ত কোনো কেব্ল দেখা যাবে না। টিভির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী ৪০ ওয়াটের স্পিকার। ডিসপ্লে চালু না করে ব্লুটুথের মাধ্যমে মুঠোফোন থেকে গান শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। স্মার্ট টিভিগুলোতে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কম।
অন্য টিভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ডিসপ্লেতে লাল, সবুজ, নীল (আরজিবি) রং থাকে। স্যামসাং এই ক্ষেত্রে ছয়টি রং ব্যবহার করে। স্যামসাংয়ের প্রতিটি টিভিতে নিজস্ব অ্যাপ স্টোর রয়েছে। এখানে থেকে বিনা মূল্যে সব অ্যাপ নামানো যায় যায়। স্মার্ট টিভিগুলোর স্টোরেজ ৮ জিবি থেকে ১৬ জিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
স্যামসাংয়ের এন সিরিজের উল্লেখযোগ্য মডেলগুলো হলো ৬৫এনইউ৭১০০, এন৪০০০, এন৪৩০০, এন৫০০০ এবং এনইউ৮৫০০। এ ছাড়া স্যামসাংয়ের এম এবং জে সিরিজের টিভিগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
ট্রান্সটেক টিভি
ল্যান কার্ড বা ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়ার পোর্টসহ টিভি বিক্রি করছে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেড। ট্রান্সটেক ব্র্যান্ডের ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি ২৪ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। টিভির মডেল টিএলইডি ৩২এস২। এই ব্র্যান্ডের কোনো ফোরকে টেলিভিশন নেই। ৪৩ ইঞ্চি সাইজে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকায় সর্বোচ্চ স্মার্ট টিভি পাওয়া যাচ্ছে।
ট্রান্সটেক টিভি সম্পর্কে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক শরিফুল হায়দার সাফি বলেন, ট্রান্সকম ডিজিটালের নিজস্ব ব্র্যান্ডে ট্রান্সটেক টিভি পাওয়া যায়। দেশেই এই টিভি সংযোজন করা হয়।
SONY টিভি
২০১৮ সালের শেষের দিকে দেশের বাজারে সনির বেশ কিছু নতুন মডেলের টিভি নিয়ে আসে র্যাংগস। ৩২ থেকে শুরু করে ৮৫ ইঞ্চি পর্যন্ত স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড টিভিগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি সিরিজে সনির স্মার্ট টিভি বিক্রি হয়। এই সিরিজগুলোর মধ্যে গেমিংয়ের জন্য এক্স সিরিজ এবং এ সিরিজের অর্গানিক লাইট ইমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) বেশ আকর্ষণীয়। পৃথিবীর সেরা ১০টি টিভির মধ্যে ৫৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের সনি গেমিং সিরিজ এক্স৯০০০ই টিভি একটি। দেশের বাজারে এই টিভির দাম ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯০০ টাকা।
ওএলইডি ডিসপ্লের সমৃদ্ধ নতুন একটি টিভি এনেছে সনি। এ সিরিজের এই টিভিটির মডেল কেডি৫৫এ৮এফ। এতে আলাদা কোনো স্পিকার নেই। টিভির শব্দ ডিসপ্লে প্যানেল থেকে আসে। মুভিতে যখন কোনো চরিত্র কথা বলবে, শব্দটা চরিত্রের মুখ থেকেই ভেসে আসবে। কেডি৫৫এ8এফ এ রয়েছে এক্স১ এক্সট্রিম প্রসেসর, অ্যাকুইস্টিক সারফেস এবং ১৬ জিবি ধারণক্ষমতা। এই টিভিগুলোতে ফোরকে ডিসপ্লের সুবিধা রয়েছে।
এক্স সিরিজের উল্লেখযোগ্য মডেলগুলো হলো ৮৫ ইঞ্চির এক্স৯০০০এফ এবং ৭৫ ইঞ্চির এক্স৮৫০০ই। ফোরকে রেজল্যুশনে ৪৩ ইঞ্চি থেকে সনির টিভি পাওয়া যায়।
LG টিভি
এলজির স্মার্ট টিভিতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ৩২ থেকে ৮৬ ইঞ্চি পর্যন্ত এলজির স্মার্ট টিভি পাওয়া যায়। ওয়েব ওএস ৪.০ দিয়ে এলজির টিভি চলে। এতে রয়েছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। নতুন স্মার্ট টিভিগুলোতে ম্যাজিক রিমোট অপশন এবং থ্রিডিসহ বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এলজি এলএম৬২০০ মডেলের ৪২ ইঞ্চি টিভিতে রয়েছে থ্রিডি সুবিধা। টিভির সঙ্গে বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে থ্রিডি চশমা। এটিতে বাড়তি ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না।
এলজি ৫৫এলএম৬৭১০ মডেলের টিভিটিতে প্যাসিভ থ্রিডি অপশন রয়েছে। এই অপশন থাকার ফলে টিভি দেখার সময় দর্শকদের চোখের ওপর চাপ কম পরবে। টিভি দেখার জন্য মাথাব্যথা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এলএম সিরিজ ছাড়াও এলএ, এলএস, এমএন, এলবি, এমটি এবং এলএফ সিরিজ উল্লেখযোগ্য। দাম শুরু ১৯ হাজার ৯০০ টাকা থেকে।
ওয়ালটন টিভি
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন বেশ কয়েকটি নতুন স্মার্ট টিভি নিয়ে এসেছে। ৩২ ইঞ্চি সাইজে ওয়ালটনের তিনটি স্মার্ট টিভি রয়েছে। মডেলগুলো হলো ডিএইচ৩২ বিওয়াই ২২০, বিএক্স২২০ এবং ডব্লিউই৩২৬০-ডিএইচএস। ফোরকে রেজল্যুশনে ৫৫ ইঞ্চির একটি টিভি ওয়ালটন বাজারজাত করছে। এ ছাড়া ৪কে ছাড়াও ৩৯, ৪৩, ৪৯ ও ৫৫ ইঞ্চি সাইজেও ওয়ালটনের স্মার্ট টিভি পাওয়া যাচ্ছে। ২৩ হাজার ৮০০ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার মধ্যে এসব স্মার্ট টিভি পাওয়া যাবে।
হাতের নাগালে স্মার্ট টিভি
স্মার্ট টিভি ব্যবহার করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘কাজের ব্যস্ততায় দুই বছর আগে টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে স্মার্ট টিভি আসার পর এ যন্ত্রটিই আমার অনেক কাজ করে দেয়। বাসায় ওয়াই–ফাই থাকাতে ইউটিউবের ভিডিওগুলো আমি এই টিভিতে দেখি।’
২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে স্মার্ট টিভির দাম। এসব টিভির ওপর দুই বছর থেকে পাঁচ বছর বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়।
টিভি মেরামত করবেন কোথায়?
নতুন টিভি কেনার সময় ক্রেতার সাধারণ প্রশ্ন ‘বিক্রয়োত্তর সেবা কত বছরের’; ‘নষ্ট হলে কোথায় ঠিক করা যাবে’ কিংবা ‘টিভি ভালো চলবে তো’। টিভির দাম, আয়তন বা কোম্পানির নামের চেয়ে ওপরের বিষয়গুলোই অনেক সময় টিভি কেনার সময় বেশি গুরুত্ব দেন ক্রেতারা। স্যামসাং বাংলাদেশের হেড অব কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস শাহরিয়ার বিন লুৎফর বলেন, ‘বর্তমান যুগ স্মার্ট সময়ের।
এ যুগে স্মার্ট ডিভাইসের চাহিদা অনেক বেশি। স্মার্ট ডিভাইস মানুষের জীবনকে যেন আরও সহজ করতে পারে, তা নিয়েই আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। এ জন্যই টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকে সবার কাছে আরও উপভোগ্য করতে স্যামসাং বিভিন্ন রেঞ্জ ও মডেলের স্মার্ট টিভি দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে। এসব টিভির বিক্রয়োত্তর সেবা ও সার্ভিস সেন্টারের বিষয়গুলো বিশেষ নজর দিই।’
বিক্রয়োত্তর সেবা
অনুমোদিত পরিবেশক বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা স্যামসাংয়ের যেকোনো মডেলের টিভিতে ক্রেতারা পাবেন দুই বছরের পার্টস ও সার্ভিস ওয়ারেন্টি। ওয়ালটন টিভিতেও বিভিন্ন মেয়াদে বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি এলইডি প্যানেল এবং খুচরা যন্ত্রাংশে দুই বছরের গ্যারান্টি। এ সময়ের মধ্যে প্যানেল বা অন্য কোনো পার্টস নষ্ট হলে বিনা মূল্যে ওই পার্টস পাল্টে দেওয়া হয়। কোনো সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয় না।
এ ছাড়া পাঁচ বছরের ফ্রি সার্ভিস। দুই বছরের পরে কোনো পার্টস নষ্ট হলে শুধু ওই পার্টসের দাম দিতে হয়। কোনো সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয় না। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হলে এর পর টিভি নষ্ট হলে নতুন পার্টসের দাম এবং সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন টিভি কোম্পানি বিভিন্ন মেয়াদে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করে থাকে।