সেনাবাহিনী সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য শেয়ার করার জন্য এই পোষ্ট দেয়া । আমি পোষ্টে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরতে চেষ্টা করব যা সম্পর্কে অনেকেরই জিজ্ঞাসা রয়েছে,অনেকের ধারনা নেই, আবার অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা প্রচলিত আছে ।

একটা কথা সত্যি যে সেনাবাহিনী বলতে আমাদের কাছে পাক আর্মির সেই জলপাই রঙের নির্মমতা এখনও ভেসে উঠে । মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর গৌরব উজ্জল ভুমিকা থাকলেও যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও দেশের রক্তাক্ত ইতিহাসের উপর জলপাই রঙের ছাপটা বরাবরই খুব তীব্র ।

সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাসী ব্যাক্তি ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে বারবার রাস্ট্রযন্ত্রে অনধিকার প্রবেশ করেছে । যে কারণে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী হিসেবে অসাধারণ ভুমিকা পালনের পরও বা বিভিন্ন দুর্যোগে অসংখ্যবার দেশবাসীর পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর পরও আমরা অনেকেই সেনাদেরকে ঠিক ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি না । কিন্তু একটা কথা সবারই মানতে হবে যে কেসেনাবাহিনীর সদস্যরা কিন্তু আপনার আমার পরিবারেরই কেউ না উ । এরা হানাদার বাহিনীর মত পাকিস্তান থেকে এসে এদেশে জুড়ে বসেনি ।
সেনাসদস্যদেরও সেনানিবাসের গণ্ডিতে বসে না থেকে পাকিস্তানি “ব্লাডী সিভিলিয়ান” মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রমাণ করতে হবে যে তারা আমাদের সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনার আমার ভাই,বোন,ছেলে,মেয়ে যে সেনাবাহিনীতে আছে,সেই সেনাবাহিনীকে আমাদের নিজের, আমাদের দেশের সেনাবাহিনী ভাবতে শিখতে হবে । পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরই নিশ্চিত করতে হবে যেন মনের ভুলেও আর কোন সেনানায়ক গনণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার দুঃস্বপ্ন না দেখেন ।

আসুন কিছু উচ্চাভিলাসী সেনানায়কের অতীতের কর্মফল সেনাবাহিনীর উপর না চাপিয়ে এদেরকে আমাদের নিজেদের সেনাবাহিনী ভাবতে শিখি । )
যা হোক এই পোষ্টে সেনারা ভাল বা খারাপ এই আলোচনা করব না । শুধু সেনাবাহিনীর কিছু কিছু বিষয়ে সংক্ষেপে পাঠকদেরকে জানাতে চেষ্টা করব । ব্লগে অনেক প্রাক্তন ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা আছেন । এ বিষয়ে তারা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি জানেন । তারা ইচ্ছা করলে তাদের মতামত দিতে পারেন । পাঠকদের অনুরোধ করব এ বিষয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞাসা করার জন্য । আমার সীমিত জ্ঞানে যতটুকু পারি তার উত্তর দেব । তবে অপ্রসঙ্গিক মন্তব্য কাম্য নয়
১। সেনাবাহিনীতে কত ধরনের বিভাগ (কোর) রয়েছে ?
সেনাবাহিনীর বিভাগ বা কোর গুলোর নাম খুব সংক্ষিপ্ত এবং সহজবোধ্য করে নিচে দেয়া হল
ক। আরমার্ড – ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া বাহিনী
খ। আর্টিলারি – কামান বা গোলন্দাজ বাহিনী
গ। সিগন্যালস- এরা অয়্যারলেস,টেলিফোন,রাডার ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন ও রক্ষা করে
ঘ। ইঞ্জিনিয়ার্স – এরা যাবতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ ছাড়াও পদাতিক বাহিনীর কাজও করতে সক্ষম
ঙ। ইনফ্যান্ট্রি- পদাতিক বাহিনী
চ। আর্মি সার্ভিস কোর- এরা সেনাবাহিনীর ফ্রেশ এবং ড্রাই রেশন, গাড়ি, চলাচলের তেল ইত্যাদি সরবরাহ করে
ছ। এ এম সি (আর্মি মেডিক্যাল কোর)- সেনাসদস্য ও তার পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে
জ। অরডন্যান্স- যুদ্ধ ও শান্তিকালীন সময়ে ব্যাবহারের জন্য বিভিন্ন সাজ সরঞ্জাম,পোষাক,নিত্য ব্যাবহারের দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ করে
ঝ। ই এম ই(ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর)- বিভিন্ন ধরণের যন্ত্র তৈরি ও গাড়িসহ অন্যান্য বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের মেইন্ট্যানেন্সের কাজ করে
ঞ। মিলিটারি পুলিশ- এরা সেনানিবাসের ভেতর পুলিশিং, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত থাকে
ট। এ ই সি(আর্মি এডুকেশন কোর)- সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে
এছাড়াও আর্মি ডেন্টাল কোর, রিমাউন্ড ভেটেরেনারী এ্যান্ড ফার্ম কোর , ক্লারিক্যাল কোর ইত্যাদি আরও কিছু ছোটখাট কোর বা বিভাগ রয়েছে ।
২। সেনাবাহিনীর পদবীসমুহ কি ?

সেনাবাহিনীতে মুলতঃ তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে ।
ক। অফিসার
খ। জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার(জেসিও)
গ। নন কমিশন্ড অফিসার(এনসিও) ও অন্যান্য পদবী

৩। সৈনিক হিসেবে যোগ দিতে কি যোগ্যতা লাগে এবং কি কি পরীক্ষা দিতে হয় ?
এস এস সি পাশ করে রিক্রুটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া যায় । প্রায়ই বিভিন্ন স্টেডিয়ামে দেখা যায় এ ধরণের রিক্রুটিং । এক দিনের মধ্যেই লিখিত, মৌখিক এবং মেডিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেরকে এই পদে যোগ দিতে ডাকা হয় । এরা সফলভাবে ছয় মাস ট্রেনিং সম্পন্ন করতে পারলেই কেবল সৈনিক হিসেবে চাকরি প্রাপ্ত হয় । এদের ট্রেনিং কোর,আর্মস বা সার্ভিস ভেদে বিভিন্ন স্থানে হয় ।

৪। সৈনিক পদে ভর্তি হলে কোন পর্যন্ত পদোন্নতি পাওয়া যায় ? ধাপ গুলো কি কি ??
একজন সৈনিক সফলতার সাথে চাকরি করলে অনারারী ক্যাপ্টেন পর্যন্ত হতে পারে । ধাপগুলো হচ্ছেঃ
ক। সৈনিক
খ। ল্যান্স কর্পোরাল
গ। কর্পোরাল
ঘ। সার্জেন্ট
ঙ। ওয়ারেন্ট অফিসার
চ। সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার
ছ। মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার
জ। অনারারী লেফটেন্যান্ট
ঝ। অনারারী ক্যাপ্টেন

৫। এনসিও এবং জেসিও কারা ?

এনসিও হচ্ছে নন কমিশন্ড অফিসার এবং জেসিও বা জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, যেখানে সৈনিকদের মধ্য থেকে পদোন্নতি হয়ে ধাপে ধাপে এই পদ্গুলো প্রাপ্ত হয় । উপরের প্যারার কর্পোরাল ও সার্জেন্ট র্যাঙ্ক দুটি এন সি ও এবং ওয়ারেন্ট অফিসার এর পরবর্তী পদ্গুলো জেসিও হিসেবে বিবেচিত । উল্লেখ্য জেসিওরা দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী কর্মচারী ।
এছাড়াও কোন সৈনিক যদি অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শনে সক্ষম হয় সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে তাকে অফিসার হিসেবে জি এল কমিশনও প্রদান করা হয় ।

সূত্রঃ
বাংলাদেশ আর্মির ওয়েবসাইট