অনেকে প্রচুর আগ্রহ এবং প্যাসিভ ইঙ্কামের আশায় কাজ না শিখেই মার্কেটপ্লেসগুলিতে একাউন্ট করে বিভিন্ন জবে এপ্লাই করা শুরু করে দেয়। কেউ কেউ কাজ পেয়েও যায়, তারপরেই ঘটে বিপত্তি। কাজ পেলো, কিন্তু কাজ না জানা কিংবা ভালোভাবে না জানার কারনে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে না। এর ফলাফল হিসেবে সেই ফ্রিল্যান্সার পায় খারাপ ফিডব্যাক এবং ক্ষতি হয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তির।

তাই ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহিদের জন্য ছোট একটি গাইডলাইন নিয়ে হাজির হলাম। এখানে আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কিছু গাইডলাইন এবং কাজ শেখার ভালো কয়েকটি মাধ্যম এর ব্যাপারে আলোচনা করবো।

বাংলাদেশের নতুনদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তারা পরিষ্কারভাবে জানে না কিভাবে তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করবে। আমরা যারা পুরাতন ফ্রিল্যান্সার আছি, আমরা বেশীরভাগ সময়ই নতুনদের “ফ্রিল্যান্সিং এতো সহজ বিষয় না” বলে চুপ করিয়ে দেই। আসলেই ফ্রিল্যান্সিং সহজ কোন বিষয় না। আবার আহামরি কঠিন কোন ব্যপারও না। কাজ শেখার আগ্রহ থাকলে (নোটঃ কাজ শেখার বলেছি, কাজ করার নয়) এবং কিছু গাইডলাইন ফলো করলে ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গঠন করা কঠিন কিছু না।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কয়েকটি স্টেপ তুলে ধরছি এখানে।

১. আপনার কাজের ক্যাটাগরি পছন্দ করুনঃ

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সর্ব প্রথম ধাপ হল, কি ধরনের কাজ করবেন সেটা পছন্দ করা। আপনি ডিজাইন করবেন নাকি প্রোগ্রামিং করবেন, নাকি মারকেটিং করবেন সেটাই সবার আগে বেছে নিতে হবে। অনেকেই একে ওকে জিজ্ঞাসা করে যে, “ভাই আমি কি শিখবো?”। এটা করবেন না। আপনি কি শিখবেন সেটা আপনাকেই পছন্দ করতে হবে। আপনি ঠান্ডা মাথায় ভাবুন যে, আপনি কোন বিষয়ে ভালো। কিংবা, ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং, ইত্যাদি, সবগুলিতেই চোখ বুলান কয়েকদিন। তারপর ভাবুন কোনটা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে। তারপর পছন্দ করে নিন আপনার কাজের সেক্টরটী। এখানে একটা অনুরোধ, যেটা পছন্দ করবেন সেটাতেই স্ট্রিক্ট থাকুন। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। অই ভাই অইটা করে ভালো টাকা কামাচ্ছে, এসব ভাবলে আপনি কখনোই সফল হতে পারবেন না। আমি টানা দুই বছর লেগে ছিলাম। ধৈর্য ধরে কাজ শিখতে থাকুন, সফলতা এমনিতেই আসবে। আর ইনকাম সব ক্যাটাগরিতেই আছে, সুতরাং অন্য কারো ইনকাম দেখে ক্যাটাগরি চেঞ্জ করবেন না।

২. কাজ শিখুন মনোযোগ দিয়েঃ

ফ্রিল্যান্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে স্কিল ইজ দ্য কিং। কাজ না জানলে এখানে আপনার কোন মুল্য নাই। আপনার যতই একাডেমিক স্বীকৃতি থাকুক না কেনো, এখানে প্র্যাক্টিক্যাল কাজই সবার আগে। তাই সময় নিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজ শিখুন। এক ঘন্টা কাজ শিখুন ৩ ঘন্টা প্র্যাক্টিস করুন। আপনি যে বিষয়ে কাজ করবেন, সেই বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে কাজে নামুন। কাজ শুরু করে বাকিটুকু শিখবো, এমন মনোভাব নিয়ে কাজে নামবেন না। সেই যুগ আর নেই, মার্কেটপ্লেসে নেমেই আপনাকে বড় বড় এক্সপারটদের সাথে কম্পিটিশন করতে হবে। তাই কম্পিটিশন করার মতো স্কিল তৈরি করেই মাঠে নামুন।

৩. সুন্দর একটি পোর্টফলিও বানানঃ

কাজ শেখা হয়ে গেলে আপনার দরকার সুন্দর একটি পোর্টফলিও। আপনি যেই সেক্টরেই কাজ করুন না কেনো, পোর্টফলিও লাগবেই। আপনার ক্রিয়েটিভ মাইন্ড থেকে কমপক্ষে ২০ টা টেস্ট প্রজেক্ট করুন। সেগুলি আপনার পোর্টফলিও সাইটে ডিসপ্লে করুন। এটা পরবর্তীতে কাজের জন্য এপ্লাই করার সময় ক্লায়েন্টকে দেখাবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, পোর্টফলিওতে যত বেশী ভালো ভালো কাজ ডিসপ্লে করবেন তত বেশী কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর পোর্টফলিও নিয়মিত আপডেট করবেন। যখনই কোন প্রজেক্ট করবেন, তখনই সেটি আপনার পোর্টফলিওতে যোগ করবেন।

আর যখন কাজ শুরু করে দিবেন, তখন ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পাওয়া ফিডব্যাকগুলি আপনার পোর্টফলিও সাইটে ডিসপ্লে করবেন।

৪. মার্কেটপ্লেসে সুন্দর একটা প্রোফাইল তৈরি করুনঃ

উপরের স্টেপগুলি পার করার পরে মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করুন। সুন্দর একটা ছবি দিন, সুন্দর করে আপনার স্পেশালিটী নিয়ে একটা অভারভিউ লিখুন, বেশকিছু পোর্টফলিও যোগ করুন, আপনার কাজের ধরনের উপরে বেস্ট কিছু স্কিল টেস্ট দিন। হয়ে গেলো সুন্দর একটি প্রোফাইল। এখানেও নিয়মিত পোর্টফলিও আপডেট করুন।

৫. জবে এপ্লাই করা শুরু করুনঃ

এখন সময় এসেছে কাজ শুরু করার। বেছে বেছে যেই জবগুলির ব্যাপারে আপনি ১০০% কনফিডেন্ট সেই জবগুলিতে এপ্লাই করুন। আমি সাজেস্ট করবো, ছোট ছোট প্রজেক্টগুলিতে প্রথম দিকে এপ্লাই করার। এপ্লাই করার সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখবেন,

কম রেটে এপ্লাই করলেই কাজ পাওয়া যায় না। কম রেটে এপ্লাই করলে হয়তো কোন কোন কাজ পেয়েও যেতে পারেন, কিন্তু আপনার প্রোফাইলে সেটি সবসময়ের জন্য যোগ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আপনাকে কেউ বেশী রেটে কাজ দিতে চাইবে না।
কাজের জন্য ক্লায়েন্টের হাতে পায়ে ধরবেন না। “প্লিজ এই কাজটি আমার খুব দরকার”। এই টাইপের মেসেজ দেখলে ক্লায়েন্টরা সাধারনত ইগ্নোর করে চলে যায়। প্রফেশনাল ভাব নিয়ে এপ্লিকেশন লিখুন।
অতি ভক্তি দেখাবেন না। সুন্দর করে আপনার স্পেশালিটি লিখুন, আপনার পোর্টফলিও লিঙ্ক দিন। কেনো আপনি এই কাজের জন্য সেরা সেটি বুঝান, দ্যাটস ইট।
যত জব সামনে আসবে সবগুলিতে এপ্লাই করার প্রয়োজন নেই। বেছে বেছে এপ্লাই করুন। বেশী বেশী এপ্লাই করলে আপনার একাউন্ট সাস্পেন্ড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৬. ক্লায়েন্টদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখুনঃ

ক্লায়েন্টদের সাথে বাজে ব্যবহার করবেন না। ক্লায়েন্ট কিছু বললে সেটা ভেবে চিন্তে জবাব দিন। ক্লায়েন্ট যত খারাপ ব্যবহারই করুক না কেনো, তার সাথে চ্যাট করার সময় কোন খারাপ শব্দ ব্যবহার করবেন না। সিমপ্লি মার্কেটপ্লেসের সাপোর্ট এ জানিয়ে দিন। তারপর তারা যা করতে বলে তাই করুন। সবসময় চেষ্টা করবেন ডেডলাইনের আগে কাজ জমা দিতে, এতে ক্লায়েন্ট খুশি হয়। আর পুরাতন ক্লায়েন্টদের কখনোই হারিয়ে যেতে দিবেন না। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পুরাতন ক্লায়েন্টরা অনেক কাজ দেয়।

এই ছিলো ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের ছোট একটি গাইডলাইন। এই স্টেপগুলি ফলো করলে আপনিও পারবেন সুন্দর একটি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে।

কোথায় কাজ শিখবেন?

এখন আসুন আলোচনা করি কোথায় কাজ শিখবেন এই ব্যাপারে। এটা আসলে নির্ভর করে আপনি কি শিখবেন তার উপরে। ইউটিউবে প্রচুর টিউটোরিয়াল রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে, সেগুলি ফোলো করতে পারেন। অনলাইনে বেশকিছু কোর্স ভিত্তিক পেইড টিউটোরিয়াল পাওয়া যায় লিন্ডা, ইউডেমিতে, সেই কোর্সগুলি করতে পারেন যদি আপনি ইংলিশে ভালো হোন।

বাংলাতেও অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়, সেগুলি ফলো করতে পারেন। তবে কোন টিউটোরিয়াল ফলো করার আগে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে সেই টিউটোরিয়ালের কুয়ালিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে নিবেন।

আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে আমি সাজেস্ট করবো ব্রেইন টিউনারস এর কোর্সটি ফলো করতে। তারা অনেক সুন্দর করে কোর্সটি সাজিয়েছেন। তাদেরকে রেফার করছি এই কারনে, তাদের হোমওয়ার্ক নামের একটি সুন্দর ফিচার রয়েছে। এটির ফলে আপনাকে হোমওয়ার্ক জমা দিয়ে পরের ভিডিও দেখতে হবে। সো, কোন ভিডিও স্কিপ করার সুযোগ নেই। এভাবে হোমওয়ার্ক করতে থাকলে, কোর্স শেষ করতে করতে আপনি কোর্সের সবকিছুই শিখে যাবেন।

সোর্স: ই প্রশ্ন ডটকম