-মুহাম্মদ শামসুল হক শামস্
কবি ও গীতিকার ।
*** কাব্যমনস্ক বিবেকী সত্তার মানুষ, সত্য সাধনায় অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের নির্ভীক ব্যক্তিত্ব শফিকুল ইসলামের লেখার ভান্ডারে সঞ্চিত পান্ডুলিপি থেকে ইতোমধ্যে তার বেশ কয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । আলোচিতব্য কাব্যগ্রন্থ “প্রত্যয়ী যাত্রা” তারই সাম্প্রতিক প্রয়াস । তার নিরলস প্রয়াস প্রমাণ করে যে, তার অপ্রতিরুদ্ধ্ গতি থামবার নয়, অন্যায়ের কাছে মিথ্যার কাছে আপোষ করবার মত নয়। আর তার নিরন্তর চেষ্টার মাঝে তিনি তার অনন্য কাব্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন বলেই প্রতিভাত হয় আমাদের কাছে ।
*** বাহুল্য শব্দের অলংকার, অনুপ্রাস বিবর্জিত আধুনিক সাহিত্য মুলতঃ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে বাংলাদেশ দিয়ে তার রক্তাক্ত অভিযাত্রা আরম্ভ করে । এই অভিযাত্রায় যারা কাব্য চর্চা করে খ্যাতমান তারা অনেক । তাদের মাঝে যারা বর্তমান তারা আক্ষরিক অর্থে নবীন হলেও লেখালেখির সাথে জড়িত বহুদিন ধরে । যেমন ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’র কবি শফিকুল ইসলাম ।
*** কবি শফিকুল ইসলাম শুধু কবি নন, তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার । তার কাব্য প্রতিভা আর গীতিকার সত্তার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সুরেলা ছন্দে রচিত ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ গ্রন্থটি প্রাঞ্জল ভাষার এক অনবদ্য সৃষ্টি ।
*** কোন দেশ বা জাতির নিপীড়িত মানুষের কষ্ট কান্না বঞ্চনার চিত্র দেখে কখনো কোন বিবেকবান সচেতন মানুষ স্থির থাকতে পারেনা । প্রকৃত অর্থে যারা কবি তারা বিবেকের তাড়নায় মজলুমের সঙ্গে আরম্ভ করেন লেখার সংগ্রাম । আলোচ্য প্রত্যয়ী যাত্রা গ্রন্থে অনলবর্ষী শব্দে রচিত সর্বমোট তেত্রিশটি সাবলিল কবিতা স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলো গীতি কবিতার আঙ্গিকে রচিত বিধায় ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ গ্রন্থটি মুলতঃ অধিকার বঞ্চিত মেহেনতী মানুষের গীতাঞ্জলী ।
*** জীবনের যন্ত্রনায় মানুষ যখন অতিষ্ট হয়ে যায় তখন সে তার অধিকার আদায়ের ব্রতে নেমে আসে প্রকাশ্য রাজপথে । আর কবির কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে থাকে-
“আমরা এবার নেমেছি পথে
আঁখিজলে নয় বুকের শোণিতে
অনেক দুঃখে ও যন্ত্রনাতে
জয় করে নিতে বৈরী জীবনটাকে।”
সত্য দাবীর কাছে অন্যায় চিরদিন পরাজিত । এই বিশ্বাস এই প্রত্যয় যে যাত্রীর সে এ-ও জানে যে তার অভিষ্ট লক্ষ্য কি । আর তখন সে নিশ্চিত করে বলতে পারে-
“আমাদের লক্ষ্য আছে জানা
আমরা কজন ভয়ভীতি মানিনা
উদ্যত মৃত্যুকে পরোয়া করিনা-
এগিয়ে যাব দ্বিধাহীন আলোর-পথযাত্রী।”
*** ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ গ্রন্থে বিপ্লবী আদর্শে, লক্ষ্যে ও চেতনায় রচিত ছাব্বিশটি কবিতা ভিন্ন আঙ্গিকে রচিত এক একটি জাগরনী শ্লোগান এবং বাংলা সাহিত্যের জন্যে এক অমুল্য সম্পদ । বাকী সাতটি কবিতার মাঝে ফুটে উঠেছে এ দেশের প্রান-কেন্দ্র এ দেশের রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত শহুরে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষোভ আর মনস্তাপ !
যেমন ‘ঢাকার গান’ কবিতায় আছে-
“কত লোক আসে যায় এখানে
আপন আপন ভাগ্যের অণ্বেষণে
কেউ দুর্ভাগ্য নিয়ে ফিরে যায়
কারো ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা।”
আরো বঞ্চনা আরো কষ্টের চিত্র খুঁজে পাই ‘ঢাকা আমার স্বপ্নের নগরী ঢাকা’ কবিতায়-
“এখানে আলোর নীচে জমে অন্ধকার,
উঁচু প্রাসাদ ইমারতের সাথে
পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে বস্তির সমাহার ।”
*** সমাজে বঞ্চিত শোষিত মানুষের কষ্ট আর বঞ্চনাকে উপজীব্য করে কবিতা লিখে অনেকে । কিন্তু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পর সত্যকে সরাসারি বলার সাহস রেখে কবিতা লিখেছে এমন কবির সংখ্যা হাতে-গুনা। ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’র কবি শফিকুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন ব্যতিক্রম প্রতিভা। তার কাব্য প্রতিভা তার কাঙ্খিত আসন সৃষ্টি করে দেবে এই প্রত্যয় আমার আছে। কাব্যগ্রন্থটি পাঠে আপনাদেরও মনে এই প্রত্যয় সৃষ্টি হবে বলে আমার ধ্রুব বিশ্বাস।
আপনার পোষ্টটি এ্যডমিনরা রিভিউ করে পাবলিষ্ট করেছে, তবে আমাদের নীতিমালায় কোন ফোন নং দেয়া নিষেধ, তাই আপনার দেয়া ফোননংটি কেটে দেয়া হল, পরবর্তি পোষ্ট আশা করি আমাদের নীতিমালা মেনে করবেন।