-খিলাফত ও আমাদের অবস্থান-
আসসালামুআলাইকুম রাহমাতুল্লাহে ওবারাকাতুহু
১ম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির কাছে তুরস্ক হারার পর ১৯২০ সালের দিকে যখন উসমানীয় খিলাফতের একদম ভঙ্গুর অবস্থা সেই সময় বৃটেন ও ফ্রান্স সরকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করে। এমনকি ঐ নাটকের টিকেটও বিক্রি করা হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে উসমানী খিলাফতের সর্বশেষ খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদ বৃটেন ও ফ্রান্স সরকার কে অনুরোধ করেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে ঐ ব্যঙ্গাত্মক নাটকটি মঞ্চস্থ না করার। এর উত্তরে বৃটেন ও ফ্রান্স সরকার খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদ কে তাদের দেশের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতার কথা বলে নাটকটি মঞ্চস্থ করবেই এই কথা বলে। এর উত্তরে মুসলিম জাহানের সর্বশেষ খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদ বৃটেন ও ফ্রান্স সরকার কে বলেছিলেন – “ আপনারা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে ঐ ব্যঙ্গাত্মক নাটকটি মঞ্চস্থ করেন তাইলে আমি জিহাদে আকবরের ঘোষনা দিব। ” খলিফার এই কথা শুনে বৃটেন ও ফ্রান্স সরকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে ঐ ব্যঙ্গাত্মক নাটকটি আর মঞ্চস্থ করার সাহস পায় নি। জিহাদে আকবর বলতে আমরা হয়ত বুঝেছি যে বড় জিহাদ। আসলে তা নয়। জিহাদে আকবর মানে হল কোন খলিফা যখন জিহাদে আকবরের ঘোষনা দেয় তখন আর কোন বালেগ ছেলে/পুরুষ ঘরে থাকতে পারবে না। তাকে অবশ্যই কাফের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহন করতে হবে। আর আজকে খিলাফত বিলুপ্ত হবার প্রায় ১০০ বছরের মত পশ্চিমা বিশ্বে কত লক্ষবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে কত ব্যঙ্গাত্মক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, কত অশ্লীল কার্টুন আকা হয়েছে। এমনকি উইকিপিডিয়ায় পর্যন্ত প্রতিমুহূর্তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অপমান করা হচ্ছে।
উইকিপিডিয়ায় কিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অপমান করছে প্রতি মুহূর্তে তা জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন ১ম পর্ব
http://en.wikipedia.org/wiki/Criticism_of_Muhammad
উইকিপিডিয়ায় কিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অপমান করছে প্রতি মুহূর্তে তা জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন ২য় পর্ব
http://en.wikipedia.org/wiki/Depictions_of_Muhammad
হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তো আমাদের সবার প্রিয় সাহাবী। আচ্ছা হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন ইরাক ইরান সিরিয়া জর্ডান মিশর এই দেশ গুলি জয় করেছিলেন তখন কি হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু ঐ বিজিত দেশগুলিকে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন না মদীনা থেকেই একটি কেন্দ্রিয় খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে ইরাক ইরান সিরিয়া জর্ডান মিসর দেশগুলি চালিয়েছেন? অবশ্যই হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত সরকারের অধীনে মদীনা থেকেই ঐ বিজিত দেশ গুলি চালিয়েছিলেন। শুধু হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু নয় হযরত ওসমান, আলী, মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু উনারা সবাই উনাদের অধীনে একটি কেন্দ্রীয় খিলাফতের মাধ্যমে এত বিশাল মুসলিম ভূ-খন্ড শাসন করেছিলেন। সাহবীদের এই আদর্শ অনুসরন করে উমাইয়া, আব্বাসীয়, উসমানীয় প্রত্যেক খিলাফত কালেই সবসময় মুসলিম রাষ্ট্র গুলি একটি কেন্দ্রিয় সরকারের অধীনে ছিল। এই খিলাফতটা ১৯২৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে টিকেছিল।
আচ্ছা আপনি যদি ভারতের মুম্বাই জম্মু এলাকার কোন মন্দিরে যেয়ে দূর্গা দেবীর নাম বলেন তাইলে কিন্তু ঐ এলাকার হিন্দুরা দূর্গা দেবীকে চিনবেনা। এর কারন হচ্ছে দূর্গা পূজা শুধু বাঙ্গালী হিন্দুদের মাঝে প্রচলিত। দক্ষিন ভারতের হিন্দুরা দূর্গা দেবীর নামই শুনে নাই। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের ভাষা ভিন্ন। বাঙ্গালী ভারতীয়রা কখনই মালয় ভাষা বুঝবেনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মন মোহন সিং উনি তো হিন্দুও না উনি তো শিখ। ভাষা বর্ন সংস্কৃতির এত বিশাল বৈচিত্র থাকার পরও কিন্তু ভারতের জনগন একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকছে। শুধু তাই নয় আমেরিকা একটা বড় দেশ, রাশিয়া একটা বড় দেশ, চীন একটা বড় দেশ, কানাডা একটা বড় দেশ, ভারত একটা বড় দেশ এই দেশ গুলির জনগণরা যদি একসাথে থাকতে পারে বিভিন্ন ভাষা সংস্কৃতির অধিকারী হয়েও তাইলে আমরা মুসলমানরা কেন একসাথে থাকতে পারবো না? আর এমন না যে আমরা মুসলমানরা কখনই একসাথে ছিলাম না। ৬৩২ সাল থেকে শুরু করে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১২৯২ বছর যদি আমরা মুসলমানরা একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত সরকারের অধীনে একসাথে থাকতে পারি তাইলে এখন আবার আমাদের মুসলমানদের এক হতে সমস্যাটা কোথায় ? এই ভারতের কি সুলতানী আমল কি খলজী বংশ কি দাস বংশ কি মুঘল বংশ যেই বংশই এই ভারত শাসন করেছিল না কেন উনারা সবসময় উমাইয়া/আব্বাসীয়/উসমানীয় যেই সময়ে যেই খলিফা ছিল তাদের কাছ থেকে রাজ্য শাসন করার অনুমতি পত্র নিয়ে আসতেন।
মুঘল সাম্রাজ্য কালে একমাত্র কাফের বাদশাহ আকবর ছাড়া আর প্রত্যেকটা মুঘল বাদশাই উসমানীয় খলিফাদের কাছ থেকে সাম্রাজ্য চালানোর অনুমতি পত্র নিয়ে আসতেন। জুম্মার খুতবা কালে ভারতের প্রত্যেকটা মসজিদেই সম্মানিত খলিফার নাম আগে উল্লেখ করা হত তারপর সেই সময়ের ভারতের সুলতানের নাম উল্লেখ করা হত। যতক্ষন পর্যন্ত খলিফার কাছ থেকে অনুমতি পত্র না নিয়ে আসতে পারতেন ততক্ষন পর্যন্ত কোন ভারতের সুলতানই ক্ষমতার মসনদে পাকাপাকি ভাবে বসতে পারতেন না। খলিফার কাছ থেকে অনুমতি পত্র পাওয়ার পরই ঐ সুলতান কে ভারতের জনগন রা মন থেকে মেনে নেত।
দক্ষিন ভারতের স্বাধীন মুসলিম সুলতান মাহমুদ শাহ বেগড়া শাসন কালে ১৪৭০ সালের দিকে যখন পর্তুগীজ হানাদাররা গুজরাট উপকূলে এসে হানা দেয় তখন উসমানীয় খলিফা মুরাদের প্রেরিত নৌবহরের সাহায্যে গুজরাটের সুলতান মাহমুদ শাহ বেগড়া পর্তুগীজ হানাদারদের শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেন। অর্থ্যাৎ খিলাফতের সাথে এই ভারত উপমাহাদেশের সব সময় যোগাযোগ ছিল। জ্বলজ্যান্ত ইতিহাস এর সাক্ষী।
১ম বিশ্ব যুদ্ধে ইংরেজ সরকার কর্তৃক তুরস্ককে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার পর ভারত উপমহাদেশের খিলাফত আন্দোলনের কথা তো আমরা সবাই জানি। ইংরেজ সাম্রাজ্যকালীন সময়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বলত- “ আমরা পরাধীন জাতি হলেও আমাদের একজন স্বাধীন খলিফা আছে। ”
হ্যা আমি স্বীকার করি কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কারনে উসমানীয় খলিফা বায়েজিদের সাথে তৈমুর লংগের ভাতৃঘাতি যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তৈমুর লংগ কিন্তু বায়েজিদ কে খলিফা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এমনকি যুদ্ধের সময়েও বলেছিল – “ হে খলিফা বায়েজিদ! পূর্ব ইউরোপের কোন খ্রিষ্টান দেশ যদি উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাইলে আমি আপনাকে সৈন্য ও রসদ সরবরাহ করবো। সুবহানাল্লাহ! ” হ্যা খিলাফতের দাবি নিয়ে যে ভাতৃঘাতি সংঘাত টা হত তা অল্প কিছুদিনের জন্য হত। খলিফার বাইয়াত হয়ে যাবার পর সব মিটমাট হয়ে যেত। কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন – “ যখন ১ জন খলিফার হাতে বাইয়াত গ্রহন সম্পন্ন হয়ে যায় তখন অন্য কেউ যদি খলিফার দাবী নিয়ে বিরোধ করতে আসে তাইলে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা কর। ( মুসলিম শরীফ ) ”
আজকে এতদিন ধরে ফিলিস্তিন গাজা বার্মা কাশ্মীর চীনের উইঘুর প্রদেশ ফিলিপাইনের মিন্দানাও থাইল্যান্ডের পাত্তানি প্রদেশে মুসলমানদের উপর এত নির্যাতন হচ্ছে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় সেই সব এলাকার মুসলিম মেয়েরা মুশরিকদের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে কই মুসলিম দেশের এত লাখ লাখ সেনাবাহিনীর কেউ যেয়ে কি সেই সব এলাকার নির্যাতিত মুসলমানদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে ? কিন্তু আজ থেকে ঠিক ১৩০০ বছর আগে ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে হিন্দু রাজা দাহির কর্তৃক যখন কিছু মুসলমান নির্যাতিত হয়েছিলেন তখন সেই সময়ের উমাইয়া খলিফা ২য় আব্দুল মালেকের নির্দেশে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সূদূর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে উনার জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিম কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ বিন কাসিম যে শুধু পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের কিছু সংখ্যক মুসলমান কেই উদ্ধার করেছিলেন তা নয় বরং সিন্ধু প্রদেশের নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েদেরকে ব্রাক্ষণদের লালসার হাত থেকে বাচিয়েছিলেন। এরপরে নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েরা কৃতজ্ঞতায় মুহাম্মদ বিন কাসিমের মূর্তি বানিয়ে পূজা শুরু করেছিলেন এই ইতিহাসও আমরা সবাই জানি। [তথ্যসূত্রঃ আল বেরুনীর ভারত তত্ত্ব] আর আজকে ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানরা এতদিন ধরে এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি ইহুদীদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে কিন্তু মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার, ইরানের শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র, মসজিদে নব্বী ও মসজিদে হারামাইনের এই পবিত্র ২ মসজিদের তথাকথিত খাদেম সউদী আরবের পেট মোটা বাদশাহ উনারা কেউই এক প্লাটুন সৈন্যও পাঠানোর সাহস পাচ্ছে না ইসরাইলের বিরুদ্ধে। কিন্তু গাজা থেকে মিশর, সউদী আরবের আর কতটুকুই বা দূরত্ব ? অবশ্যই এই দূরত্বটা পাকিস্তানের সিন্ধু থেকে সিরিয়ার দামেস্কের সমান নয়। ৭১২ সালে যদি এত দীর্ঘ রাস্তা পার হয়ে খলিফার নির্দেশে এক মুসলমান আরেক মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে তাইলে এই ২০১২ সালে কেন সামান্য ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে মিসর, সউদী আরব, জর্ডান, ইরানের সেনাবাহিনী গাজার মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারবেনা ? এখন মুসলমানরা জাতিসংঘের কাছে হাত পাতে ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানদের কে বাঁচানোর জন্য। আসলে খিলাফত বিহীন বর্তমান মুসলমানরা খুবই আনুষ্ঠানিকতা প্রিয় হয়ে গেছে। আফসোস!
কি উমাইয়া কি আব্বাসীয় কি উসমানীয় খিলাফত প্রত্যেকটা খিলাফত কালেই প্রত্যেকটা খলিফা সারা বিশ্বের প্রত্যেকটা মুসলিমের জান মালের নিরাপত্তাটাকে সর্বোচ্চ বিবেচনা করে তারপর উনাদের ভবিষ্যত কর্ম পরিধিটা নির্ধারন করতেন। এই যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি এর দ্বারা কখনই মুসলমানদের সামগ্রিক নিরাপত্তা সাধন হবেনা। একমাত্র খিলাফতই পারে বার্মা কাশ্মীর চীনের উইঘুর প্রদেশ ফিলিপাইনের মিন্দানাও থাইল্যান্ডের পাত্তানি প্রদেশ গাজার মুসলমানদের কে মুশরিকদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে। “খলিফা বার বার সৈন্য প্রেরন করবেন খলিফা ইসলাম কে নিয়ে যাবেন সমগ্র মানব জাতির কাছে।”
আমরা ইসলাম শিখবো কার কাছ থেকে অবশ্যই সাহাবীদের কাছ থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর সাহবীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লাশ দাফন করতে ২ রাত বিলম্ব করেছিলেন শুধু কে খলিফা হবে এটা নির্ধারন করতে যেয়ে। [ তথ্যসূত্রঃ সীরাতে ইবনে হিশাম ]
এটা সবারই জানা ছিল যে কোনও ব্যক্তির দাফন একটা ফরজ কাজ এবং যারা এটা করবে তারা দাফন কার্যের পূর্বে তারচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজে নিজেদেরকে নিযুক্ত করবেনা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কিছু সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর নিজেদেরকে একজন খলিফা নিয়োগের ব্যাপারে ব্যস্ত রেখেছিলেন যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাফন কার্যও তাদের উপর ফরজ ছিল। অন্যান্য সাহাবীরা রাযিয়াল্লাহু আনহু এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাফন কার্য বিলম্বিত করার প্রতিবাদ করার সামর্থ্য থাকা সত্বেও উনারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃতদেহ দাফনের ব্যাপারে দু’রাত বিলম্ব করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত দেহকে দাফনের চেয়েও একজন খলিফার নিয়োগ অধিক গুরুত্বপূর্ণ উপরোক্ত ঘটনার মাধ্যমে সাহাবীরা এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন।
সাহাবীরা হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর হযরত উমর এরপর হযরত ওসমান এরপর হযরত আলী এরপর মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদিও কখন কাকে খলিফা নিয়োগ দেয়া হবে এটা নিয়ে সাহাবীদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছিল কিন্তু একজন খলিফা যে সব সময় থাকতেই হবে এই ব্যাপারে সাহাবীরা একমত ছিলেন।
তাই মুসলিম বিশ্বে অবশ্যই একজন খলিফা থাকতে হবে এটা হচ্ছে ইজমা আস সাহাবাহ যা শরীয়তের একটি সুস্পষ্ট দলীল। কোন মুসলমান যদি সাহাবীদের কোন ইজমাকে অস্বীকার করে তাইলে সে কাফের হয়ে যাবে এখন সে যত বড় পন্ডিতই হোক না কেন। আবার আমরা জানি ওয়াজিব পূরনের জন্য যা প্রয়োজন তা নিজেই একটা ওয়াজিব। যেহেতু খলিফা ছাড়া ইসলামী বিধিবিধান-কিয়াস -জিহাদ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় তাই খলিফা থাকা ও খিলাফত পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করা জনমত গঠন করা এটাও একটা ওয়াজিব। বুখারী ও মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে যেটাকে মুত্তাফিক আলাইহি বলা হয় যেইখানে আবু হাজিমের বরাত দিয়ে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, “আমি আবু হুরায়রার সাথে পাঁচ বছর অতিবাহিত করেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বনী ইসরাঈলকে শাসন করতেন নবীগণ। যখন এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তার স্থলে অন্য নবী আসতেন, কিন্তু আমার পর আর কোনও নবী নেই। শীঘ্রই অনেক সংখ্যক খলিফা আসবেন। সাহাবীরা তখন জিজ্ঞেস করলেন তখন আপনি আমাদের কী করতে আদেশ করেন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমরা একজনের পর একজনের বা’য়াত পূর্ণ করবে,তাদের হক আদায় করবে। অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন।” [বুখারী ও মুসলিম]
এই হাদিসে সিয়াসাত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আরবীতে সিয়াসাত শব্দের অর্থ হল রাজনীতি বা উম্মতের দেখাশুনা করা। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে আল-আরাজ ও সেই সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, “রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই, ইমাম হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ যার পেছনে থেকে জনগণ যুদ্ধ করে এবং যার মাধ্যমে জনগণ নিজেদেরকে রক্ষা করে।” [মুসলিম]
ইসলামী শরীয়াহ ইমামত ও খিলাফত ও ইমাম ও খলিফা একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের অনেকের মাঝে একটা ধারনা আছে যে ইমাম মেহেদী আসার পর আবার খিলাফত শুরু হবে। আসলে এই ধারনা টা ভুল। ইমাম মেহেদী সম্পর্কে যে হাদীস টা আছে তা আমরা যদি দেখি তাইলে সেইখানে উম্মুল মুমীনিন উম্মে সালামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্নিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ,
“একজন খলিফার মৃত্যুর পর লোকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিবে তখন মদীনা থেকে একব্যাক্তি বের হয়ে মক্কার দিকে ছুটে পালাবে। এ সময় মক্কাবাসীগন তার নিকট এসে তাকে জোরপূর্বক বের করে আনবে। কিন্তু সে তা পছন্দ করবে না। অতঃপর হাযারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে লোকেরা তার কাছে বায়াত গ্রহন করবে। এরপর সিরিয়া থেকে একটি সেনাবাহীনি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পাঠানো হবে। কিন্তু মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বাইদা নামক স্থানে তাদেরকে ভূগর্ভে পুঁতে ফেলা হবে। তারপর যখন চারদিকে এই খবর ছড়িয়ে পরবেএবং লোকেরা চাক্ষুষভাবে এই অবস্থা দেখবে তখন শামের আবদাল গন এবং ইরাকের এক বিরাট দল তার কাছে আসবে ও তার কাছে বায়াত গ্রহন করবে। এরপর কোরাইশদের এক ব্যাক্তি যার মামা হবে বনু কালব , সেও ইমামের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে। ইমামের সেনাবাহীনি তাদের উপর বিজয়ী হবে। এটাই কালবের উত্থান। ইমাম মানুষের মধ্যে নবীর আদর্শ মোতাবেক কাজ কর্ম পরিচালনা করবেন এবং তার শাসনামলে ইসলাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি সাত বছর অবস্থান করবেন। তারপর ইন্তেকাল করবেন এবং মুসলমানগন তার জানাযা পড়বে”।( আবু দাঊদ)
উপরোক্ত হাদিস হতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে। তাফসীরে মা আরেফুল কোরআনে ইমাম মেহেদীকে সর্বশেষ খলিফা বলা হয়েছে। মূলত ইমাম মেহেদীর আগমনের পর খিলাফতের সমাপ্তি ঘটবে। তাই ইমাম মাহদি এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন এটা সম্পূর্ন ভুল ধারনা।
বর্তমান পৃথিবীতে অনেক গুলি মুসলিম দেশ রয়েছে। কোন মুসলিম দেশের শাসক যদি নিজেকে খলিফা হিসাবে ঘোষনা করে ও সমগ্র মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব নিতে রাজি হয় এবং উনি যদি বলেন আমার শাসনাধীন ভু-খন্ড সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য তাইলে উনাকেই আমরা খলিফা হিসাবে মেনে নিয়ে বাইয়াত দিব।
খিলাফত যে আবার আসবে এই ব্যাপারে মুসনাদে আহমদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। সেইখানে বলা হয়েছে- তোমাদের মধ্যে নব্যুয়ত থাকবে যতক্ষন আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ইচ্ছা করেন; তারপর তিনি তার সমাপ্তি ঘটাবেন; তারপর প্রতিষ্ঠা হবে নব্যুয়তের আদলে খিলাফত। তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষন আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ইচ্ছা করেন; তারপর তিনি তার সমাপ্তি ঘটাবেন; তারপর প্রতিষ্ঠা হবে বংশীয় শাসন। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় এরও সমাপ্তি হবে। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে জুলুমের রাজত্ব এবং তা তোমাদের উপর থাকবে যতদিন আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এরপর আবার আসবে নব্যুয়তের আদলে খিলাফত। ” এই হাদিস অনুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল ভবিষ্যত বাণীই বাস্তবে সংঘঠিত হয়ে গেছে। যেমন এখন আমরা আছি জুলুমের রাজত্বে এবং আশা করছি এই জুলুমের রাজত্বের পর অতিশীঘ্র আমাদের মাঝে নব্যুয়তের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা ফিরে আসবে।
শুধু তাই নয় খিলাফত যে আবার আসবে এ নিয়ে আরো হাদীস রয়েছে। যেমন
ইবনে আসাকির-এর “দামেস্কের ইতিহাস” গ্রন্থে ইউনুস ইবনে মায়সারা ইবনে হালবাস হতে বর্ণিত,
هذا الأَمْرُ كائن بَعْدِي بِالْمَدِيْنَة ثُمَّ بِالشام ثُمَّ بِالْجَزِيْرَة ثُمَّ بِالْعِراق ثُمَّ بِالْمَدِيْنَة ثُمَّ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ فَإِذَا كَانَ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ فثم عقر دارها وَلَن يخرجها قَوْم فتعود إِلَيْهِمْ أَبَدا
রাসূল (সা) বলেন, এই শাসন ব্যবস্থা (খিলাফত) আমার পর থাকবে মদীনায়, তারপর আল-শামে, তারপর আরব উপদ্বীপে, তারপর ইরাকে, তারপর (হীরাকলের) শহরে, তারপর বায়তুল মাকদিসে (আল-কুদ্স) এবং যখন আল-কুদ্সে প্রতিষ্ঠিত হবে তখন সেটাই হবে তার স্থান। এরপর লোকেরা (কেউ) তা কখনো বের (পরিবর্তন) করে দিতে পারবে না এবং তা চিরকালের জন্য তাদের কাছে ফিরে আসবে। পূর্ববর্তী খলীফাদের সময়ে এই উম্মাহ্ খিলাফতের রাজধানী দেখেছে মদীনায়, আল-শামে, ইরাকে ও (হীরাকলের) শহরে অর্থাৎ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। ইনশাল্লাহ আবার যখন খিলাফত ফিরে আসবে তখন তার রাজধানী হবে আল-কুদ্স অর্থ্যাৎ জেরুজালেম শহরে। ইবনে সাদ ও কানজুল উম্মাল ১৪/২৫২ এর গ্রন্থকার উভয়ে আবু উমায়রা আল মাযানী হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন, تَكُوْنُ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ بَيْعَة هدى বায়তুল মাক্দিসে একটি হেদায়েতপূর্ণ আনুগত্যের শপথ নেয়া হবে। ইমাম আহমদ তার মুসনাদ (৫/২৮৮), আবু দাউদ তার সুনান (নং ২৫৩৫) এবং হাকিম তার আল-মুসতাদরাক গ্রন্থে বর্ণিত হাদীসে বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন,
يَا ابْنَ حَوَالَةَ، إِذَا رَأَيْتَ الْخِلَافَةَ قَدْ نَزَلَتْ أَرْضَ الْمُقَدَّسَةِ فَقَدْ دَنَتْ الزَّلَازِلُ وَالْبَلَابِلُ وَالْأُمُورُ الْعِظَامُ وَالسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْ النَّاسِ مِنْ يَدِي هَذِهِ مِنْ رَأْسِكَ
হে ইবন হাওয়ালা, যখন তুমি দেখবে খিলাফত পবিত্র ভূমিতে (আল-কুদস) ফেরত এসেছে তখন ভূমিকম্প, দুর্যোগ ও এরূপ বিশাল ঘটনা অনিবার্য হয়ে পড়বে। আর তখন কিয়ামত মানুষের ততটুকু কাছে চলে আসবে আমার এই হাত থেকে তোমার মাথার দুরত্ব যতটুকু। [রাসূল (সা) এই হাদীসটির বর্ণনাকারী সাহাবী আবদুুল্লাহ বিন হাওয়ালার মাথা/কপালে হাত রেখে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন।] ইমাম আহমদ তার মুসনাদে (২/১৭৬), আল দারিমি তার মুসনাদে (অধ্যায় ১, পৃষ্ঠা ১২৬) ও আল হাকিম তার আল মুসতাদরাক (৩/৪২২) এ আবু কাবিল হতে বর্ণনা করেন, … سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْمَدِينَتَيْنِ تُفْتَحُ أَوَّلًا قُسْطَنْطِينِيَّةُ أَوْ رُومِيَّةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَدِينَةُ هِرَقْلَ تُفْتَحُ أَوَّلًا يَعْنِي قُسْطَنْطِينِيَّةَ …
রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, “কোন শহরটি আগে জয় করা হবে, কনস্ট্যানটিনোপোল নাকি রোম?” রাসূল (সা) বললেন, ‘হীরাকলের নগরী প্রথম জয় করা হবে’ অর্থাৎ কনস্ট্যানটিনোপোল। হাদীসে উল্লেখিত প্রথম বিজয়টি ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। কনস্ট্যানটিনোপোল অর্থ্যাৎ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামের অধীনে এসেছে উসমানীয় সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ-এর আমলে ১৪৫৩ সালে। রাসূল (সা)-এর ভবিষ্যৎবাণীর ৮০০ বছর পর এ বিজয় অর্জিত হয়। আল্লাহর ইচ্ছায় পরবর্তী খিলাফত রোম বিজয় করবে সেটাও বেশি দূরে নয়। সার্বিক আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি মুতাওয়াতির বিল মা’না [বহু সংখ্যক শুদ্ধ বর্ণনা] হাদীস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। এক হিসেবে দেখা যায়, খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত হাদীসসমূহ অন্তত ২৫ জন সাহাবী, ৩৯ জন তাবেয়ী ও ৬২ জন তাবে-তাবেয়ী দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। তাই খিলাফতের পুনরাগমন শরীয়াতের অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমাণিত বিষয়।
আরো যদি জানতে চান খিলাফত সম্বন্ধে ক্লিক করুন-
জিহাদ, খিলাফত, সমাজ ও রাষ্ট্ ও জাগরন
www.facebook.com/pages/Al-Quran-Modern-Science/140069416050931
শারিয়ার আজম
Thanks shear korar jonno, kentu ato gulo catagory ato tik dan kano? Ai gulo te sudu islamic dan.