ব্যথা নেই বা জীবনে বা জীবনে একবার কোমর ব্যথা হয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন গভেষণায় দেখা গেছে যে, সারাবিশ্বের 80 ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক লোক জীবনের কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন।এমন কোন পরিবার নাই যে পরিবারের কোন না কোন সেদস্যের কোমর বা মাজা ব্যথা নেই।শিরদাঁড়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।শিরদাঁড়া ছাড়া আমরা দাড়াতে পারবনা।শিরদাঁড়ার মধৌ গুরুত্বপূর্ণ স্পাইনাল কর্ড থাকে।শিরদাঁড়া আমাদের শরীরের ওজন বহন করে এবং কাজ কর্ম করতে সাহায্যে করে।

শতকরা 70-75 ভাগ মাজায় ব্যথার কারণ মেকানিক্যাল। শিরদাঁড়ার গঠন অনুযায়ী প্রথমে মাসলই বেশি ইনজুরী হয়।ব্যকপেইন হওয়ার প্রধান কারণ বেশি সময় বসে বসে কাজ করা,বসে এবং সামনে ঝুকে কাজ করা ও বসে-সামনে ঝুকে বাম বা ডান দিক থেকে কোন কিছু নেওয়‍া কিংবা হঠাৎ করে নীচু হয়ে ভারী বস্তু উঠানো। এছাড়াও ডিক্স এর অসুস্থতা, শীরদাঁড়ায় টিউমার, ইনফেকশন এবং হাড়ভাঙ্গার জন্যও মাজা বা কোমরে ব্যথা হতে পারে।হবে এই কারণ সমূহের জন্য যে ব্যথা হয়- সে রকম রুগীর সংখ্যা খুবই কম।কোমর ব্যথা সাধারণত কোমরে থাকে আবার কখনও কখনও ব্যথা কোমর থেকে হাঁটু বা পায়ের দিকে যায়। কোন কেন রুগী বসে থাকলে বেশী ব্যথা হয় আ‍বার কখনও কখনও হাঠলে বেশি হয়। কখনও কখনও হাঠলে কমেও যায়।কোমর-ব্যথার চিকিৎসা দুই ভাবে করা হয়।তবে অপারেশন ব্যতিত বা ফিজিওথেরাপি অন্যতম।কোমর ব্যথার রুগীদের অপারেশন প্রয়োজন হয় খুব কম-যেমন শতকরা 3/4 জনের অপারেশন দরকার হতে পারে।

ফিজিওথেরাপি শুরুর পূর্বেই রুগীর সঠিকভাবে শারীরিক এ্যাসেসমন্টে এবং ল্যাবরেটরী পরীক্ষা করা দরকার।কারণ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একমাত্র সঠিক এ্যাসেসমেন্ট এবং অন্যান্য পরিক্ষার উপরই অধিকাংশ সময় নির্ভর করে। সঠিক শারীরিক পরিক্ষাই বের করে দেয় রুগীর কি কি অসুবিধা আছে বা কোন মাসল, লিগামেন্ট, ডিক্ষ বা কোন কোন স্ট্রাকচারে অসুবিধা।আমার 34 বৎসরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি সঠিক সমস্যা নির্ণয়ের মাধ্যমেই, প্রকৃত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করা সম্ভব।

আমি ফিজিওথেরাপি করি এ্যাভিডেন্স বেসড বা প্রমাণ সাপেক্ষ্য। চিকিৎসার প্রয়োজনে রুগীর সমস্যাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- অল্পদিনের অসুস্থতা এবং বেশি দিনের অসুস্থতা। আর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য আমি সম্পূর্ন শিরদাঁড়াকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করি। অল্পি দিনের অসুস্থতা বা কষ্টের জন্য অল্প বিশ্রাম, প্রাথমিক ভাবে ব্যথা নাশক ঔষুধ, মাংসপেশী শিথিল করার জন্য মাসল রিলাকজেন্ট এবং এর সঙ্গে ভিটামিন সিডেটিভ ও ক্যালসিয়াম জাতীয় ঔষুধ খাওয়া যেতে পারে।বিশ্রাম এবং ঔষুধের সাথে সাথে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যাবশ্যক। অনেকেই বলে থাকেন ব্যথা থাকায় অবস্থায় ব্যয়াম করবেন না।কিন্তু আমি বলব, সঠিক ব্যয়াম ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। শুধু সঠিক ব্যয়ামই খুব দ্রুত কোমর ব্যথা কমাতে তাৎক্ষনিক সাহায্য করে এবং তা প্রমাণিত।

এখানে একজন রুগীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।রুগীর বয়স 32 বৎসর।বিছানা থেকে ছেলেকে উঠাতে হঠাৎ করে মাঝায় প্রচন্ড ব্যথা হয়।ব্যথায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।বসলেও ব্যথা হচ্ছে। জোরে কাশি দিলেও ব্যথা হয়।আমার বিশ্বাস এমন রুগী সমাজে অনেক আছে।কেউ বাচ্চা উঠাতে আবার কেউ ভারী জিনিস উঠাতে এমন কষ্ট পাচ্ছে।

পরামর্শঃ বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। মাজার যেখানে ব্যথা সেখানে প্রথমে ওলিভওয়েল হালকা করে মেখে একটা কাপড়ে বরফ নিয়ে মাজায় লাগিয়ে রাখুন দশ মিনিট দিনে 2-3 বার।এর পর আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে পাঁচ বার ব্যয়াম করুন।ঔষুধ, ব্যথা-নাশক, রিলাকজেন্ট, ভিটামিন সিডেটিভ, এন্টাসিড খাবেন দিনে 2 বার।সম্ভব হলে এর মধ্য একজন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্টের সঙ্গে দেখা করবেন।

খাদ্য তালিকায় একটু পরিবর্তন আনতে হবে যেমন প্রচুর পানি পান করতে হবে।মৌসুমি ফল বেশি খেতে হবে।খাদ্য তালিকায় আদাও আদার রস, পেঁপে এবং কাল জিরা যুক্ত করতে হবে। ভাত ও ভাত জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।গড়ে 8 ঘন্টা ঘুমালে এ রুগ থেকে আরও দ্রুত আরোগ্য পাওয়া যায়।আশা করি যারা এরকম কষ্টে ভুগছেন এ চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন এবং কষ্ট মুক্ত থাকবেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে ব্যকপেইন এর জন্য আমার সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা স্থান করে নিয়েছে তার নিজস্ব প্রযুক্তি আঙ্গিকে। কোমর ব্যথার সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন হন। একজন অভিজ্ঞ ব্যকপেইন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্ট আপনাকে ব্যাকপেইন প্রতিরোধ করার জন্য সঠিক ব্যয়াম শিখিয়ে দিয়েন।এ ব্যয়াম নিয়মিত করে ব্যাকপেইন প্রতিরোধ করুন। কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ব্যাকপেইন ফিজিওথেরাপিষ্ট এর নিকট থেকে চিকিৎসা নিবেন।ফিজিওথেরাপিষ্টের পরামর্শ নিন।এবং ব্যথা প্রতিরোধ করুন।কোমর ব্যথার কষ্ট থেকে ব্যথা মুক্ত থাকুন।