বর্তমান মৌসুমের পরিবর্তনের এই সময়টাতে গরম খুব বাড়াবাড়ি রকমের, আর এমন প্রচণ্ড এক উত্তাপের সময়ে জীবনযাপনে শান্তি এনে দিতে পারে একটি এয়ার কন্ডিশনার। এসি কিনতে গিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হন। কোন ধরনের, কত সাইজের এসি কিনবেন অনেক প্রশ্ন আসে। অনেকে শুধু ব্র্যান্ডমুগ্ধতা দেখে এসি কিনে বসেন। অনেক বিষয় বিবেচনা না করে এসি কেনার ফলে দিনশেষে ঠকতে হয়, পরে এতো দামি একটি বিনিয়োগকে ফিরিয়েও নেয়া যায় না।
অনেকে আবার ১টন,১.৫টন কিংবা ২টন বলতে এসির সাইজকে বোঝেন; তবে ১ টন মানে ১২০০০ বিটিইউ/আওয়ার একইভাবে ১.৫ টন মানে ১৮০০০ বিটিইউ/আওয়ার। ১ টনের এসি প্রতি ঘণ্টায় ঘর থেকে ১২০০০ বিটিইউ তাপ শোষণ করতে পারে। সেইহিসেবে যত বেশি টন ; তত বেশি তাপ শোষণ ক্ষমতা। আমাদের দেশের আবহাওয়ার উপর বিবেচনা করে একটি এসি সঠিক পরিমান তাপ শোষণ করতে পারবে কিনা, সেই বিষয়টিও এসি কেনার পূর্বে বিবেচনা করে নিতে হবে।
এই আরটিকেলে আমরা ওয়ালটনের ১.৫ টন ক্যাপাসিটির ক্রিস্টালাইন সিরিজের WSI-KRYSTALINE-18C [Smart Defender] এসির সাথে এলজি, প্যানাসনিক, জেনারেল এবং স্যামসাং এর একই ক্যাপাসিটির এসির তুলনা করে দেখবো। পরিশেষে আমরা বোঝার চেষ্টা করব, কোন এসিটি কিনে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে,পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের সাথে মিলিয়ে ওয়ালটনে আমাদের জন্য সকল সুবিধা পাচ্ছি কিনা, সেটিও বিবেচনা করব।
WSI-KRYSTALINE-18C [Smart Defender] | 66000 | |
LG S4UQ18KL27B MA | 92900 | |
Panasonic CU-US18SKD | 87000 | |
General ASG-18ABC-W | 96000 |
S4UQ18KL27B MA মডেলটি এলজির ১৮০০০ বিটিইউ তথা ১.৫ টন ক্যাপাসিটির একটি এসি। বাজারে ৯২৯০০ টাকায় পাওয়া যাবে দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি। এটি একটি ইনভার্টার প্রযুক্তির স্প্লিট এসি। এই এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর-৪১০এ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। বাংলাদেশে দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি কিনলে ১০ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে।
CU-US18SKD মডেলটি প্যানাসনিকের ১৮০০০ বিটিইউ তথা ১.৫ টন ক্যাপাসিটির একটি এসি। বাজারে ৮৭০০০ টাকায় পাওয়া যায় দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি। এই এসিটিতে পাবেন একটি টেম্পারেচার ইনডিকেটর। এটি একটি ইনভার্টার প্রযুক্তির স্প্লিট এসি। এই এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর-৪১০এ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। বাংলাদেশে দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি কিনলে এর কমপ্রেসরে ২ বছর এবং সার্ভিসে ১ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে। যা ওয়ালটনের তুলনায় কম।
ASG-18ABC-W মডেলটি জেনারেলের ১৮০০০ বিটিইউ তথা ১.৫ টন ক্যাপাসিটির একটি এসি। বাজারে ৯৬০০০ টাকায় পাওয়া যাবে দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি। এই এসিটিতে পাওয়া যাবে এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল ফিল্টার। তবে এটি একটি নন-ইনভার্টার এসি। এই এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর-২২ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। বাংলাদেশে দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি কিনলে এর কমপ্রেসরে ৩ বছর এবং স্পেয়ার পার্টস ও সার্ভিসে ২ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে। যা কিনাও ওয়ালটনের তুলনায় অনেক কম।
এখন আসি ওয়ালটনের ক্রিস্টালাইন সিরিজের WSI-KRYSTALINE-18C [Smart Defender] মডেলে। এটি একটি দেড় টন তথা ১৮০০০ বিটিইউ ক্যাপাসিটির স্প্লিট এসি। এই এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর-৪১০এ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। বাতাস বিশুদ্ধকরণ এবং ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মত ক্ষতিকারক মাইক্রো এলিমেন্ট বাতাস থেকে দূরীকরণের জন্য এসিটিতে পাওয়া যাবে ডুয়াল ডিফেন্ডার এবং আইওনাইজার প্রযুক্তি। আর এটি আইওটি বেইজড, সেকারনে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে একে একটি মোবাইল অ্যাপ দ্বারাই নিয়ন্ত্রন করা যাবে। এলজির ডুয়াল ডিফেন্ডার প্রযুক্তির মত ওয়ালটনের ক্রিস্টালাইন সিরিজের এই এসিতে পাওয়া যাবে টুইনফোল্ড ইনভার্টার প্রযুক্তি। বাংলাদেশে দেড় টন ক্যাপাসিটির এই এসিটি কিনলে এর কমপ্রেসরে ১০ বছর এবং সার্ভিসে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে।
বর্তমান সময়ে একটি মানসম্মত এসি কেনার ক্ষেত্রে ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যাতিত এসি কেনার কোনো বিকল্প একদম নেই বললেই চলে। নন-ইনভার্টার এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। এখানে এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হওয়ার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় এলে এসির কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। আবার ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলে, তখন চালু হয়। এভাবে বারবার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ার কারণে, এসি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরে রুমের পরিবেশের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে। আজকের তালিকায় ওয়ালটন, এলজি এবং প্যানাসনিক এসিতে ইনভার্টার প্রযুক্তিতো ব্যবহার করার হয়েছেই, তাও এখানে কিছুতে অত্যাধুনিক ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন ওয়ালটনে টুইনফোল্ড ইনভার্টার প্রযুক্তি, একইভাবে এলজিতে ডুয়াল ইনভার্টার। অন্যদিকে যদি আমরা জেনারেলের দিকে তাকাই, তবে সেটি একটি নন-ইনভার্টার এসি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়েও ভাবতে হবে, তাই এসিতে সঠিক এবং পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাতাসে তাপ তৈরির দিক দিয়ে ‘আর-৪১০এ’ এর চাইতে ‘আর-২২’ এগিয়ে। তাছাড়াও ‘আর-৪১০এ’ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ‘আর-২২’ এর চাইতে বেশি বিদ্যুত সাশ্রয়ীও বটে! ‘আর-২২’ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস সমৃদ্ধ এসিতে সিস্টেম ওভারহিটিং এর সমস্যাও বেশি হয়। এলজি, প্যানাসনিক এবং আমাদের দেশীয় ওয়ালটনে যুগোপযোগী ‘আর-৪১০এ’ রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হলেও, জেনারেল এসিতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আর-২২’ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস।
যদি এখন দামের দিকে আসি, ওয়ালটনের ক্রিস্টালাইন সিরিজের দেড় টনের এসিটির বাজার মূল্য ৬৬ হাজার টাকা। নন-ইনভার্টার জেনারেল ৯৬ হাজার টাকা। এলজি প্রায় ৯৩ হাজার টাকা এবং প্যানাসনিক ৮৭ হাজার টাকা। সকল সুবিধার বিবেচনায় ওয়ালটন এর ক্রিস্টালাইন সিরিজের দেড় টনের এই ইনভার্টার এসিটি দারুন ভাবে বাকিসব ব্র্যান্ডের এসির সাথে টেক্কা দিতে সক্ষম, আর সেই হিসেবে তালিকার অন্য এসিগুলোর চাইতে এটি অনেক বেশি সাশ্রয়ও হচ্ছে। আর ওয়ালটন এসির জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে বিক্রয়ত্তর সার্ভিসিং সেবাও দিচ্ছে। যদি আদৌ কোন সমস্যার সম্মুখীন হন কেউ, যা অন্যসব ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেক বেশি, আর এটি ওয়ালটনে আস্থা রাখার জন্য অন্যতম একটি কারন।
অন্যান্য এসির কমপ্রেসর বাইরের দেশে বিদ্যুত এবং তাদের আবহাওয়ার জন্য তৈরি করা হলেও, ওয়ালটন এসির কমপ্রেসর বিশেষায়িতভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং আমাদের দেশের বিদ্যুৎ এর হিসেবে তৈরি করা। এসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কম্পোনেন্ট কমপ্রেসর, অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় অন্তত আমাদের দেশে ওয়ালটনের কমপ্রেসরই বেশি টেকসই এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী হবে, এটা বাস্তবিক। সুতরাং পরিশেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, দেশের টাকা বাইরে না পাঠিয়ে অত্যান্ত উপকারী এই ইলেকট্রনিকস অ্যাপ্লায়েন্স কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের সঙ্গী হয়ে আমরা ওয়ালটন এসিকেই পছন্দ করতে পারি।