বিগত বেশ কিছু সময় ধরে, কম বাজেটে দারুন দারুন সব স্মার্টফোন নিয়ে এসে বাজারে ওয়ালটন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় কিছুদি আগের প্রিমো এইচএম৫ স্মার্টফোনের পর ওয়ালত্ন বাজারে নিয়ে আসল তাদের আরেকটি বাজেট ফোন প্রিমো এইচ৯ প্রো। প্রিমো এইচ৯ এর সিকুয়াল এই এইচ৯ প্রো স্মার্টফোনটির দারুন কিছু সুবিধার ভেতর আপনি পাবেন; ৬৪ জিবি রম, ৪ জিবি র‍্যাম, ১.৮ গিগাহার্জ কোয়াড কোর প্রসেসর, ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপ সহ আরো অনেককিছু। আজকের আর্টিকেলে স্মার্টফোন্টি নিয়ে আলোচনা থাকবে বিস্তারিত।

এক নজরে প্রিমো এইচ৯ প্রো স্মার্টফোনটি,

  • ৪জি ভোএলটিই নেটওয়ার্ক সাপোর্ট
  • ৪ জিবি র‍্যাম, ৬৪ জিবি রম (২৫৬ জিবি পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমরি সাপোর্ট)
  • হেলিও এ২০ চিপসেট
  • ৬.১ ইঞ্চি ১৯ঃ৯ রেসিও আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেল
  • ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপ
  • ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা
  • ফাস্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর
  • ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি
  • দাম ৯৫৯৯ টাকা

স্মার্টফোনটির বক্স খুলে ভেতরে যা যা পাবেন,

হার্ডওয়্যার ও পারফর্মেন্স

প্রিমো এইচ৯ প্রো স্মার্টফোনটিতে পাচ্ছেন মিডিয়াটেক এর ১২ ন্যনোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি হেলিও এ২০ চিপসেট। এটি একটি ১.৮ গিগাহার্জ ক্লক স্পীডের কোয়াড কোর সিপিইউ। এনটুটু বেঞ্চমার্কে এর স্কোর এসেছে ৮১১৯২। গিকবেঞ্চ অ্যাপে সিঙ্গেল কোরে এসেছে ১৫৪ এবং মাল্টি কোরে রেজাল্ট এসেছে ৫১৮। স্মার্টফোনটির গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটে থাকছে ‘পাওয়ার ভিআর রগ জিই৮৩০০’ জিপিইউ।

এই বাজেটে প্রিমো এইচ৯ প্রো এর অন্যতম আকর্ষণ হল, এর সিস্টেম ব্যাকআপ দিবে একটি ৪ জিবি র‍্যাম। এর সাথে ডিভাইসটিতে ইন্টারনাল স্টোরেজ পাওয়া যাবে ৬৪ জিবি। স্মার্টফোনটিতে পাবজি এবং ফ্রিফায়ারের মত গেমস খেলা যাবে দারুন ভাবে। আর ইন্টারনাল স্টোরেজ বেশি হবার কারনে মাল্টিটাস্কিং এও স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে শান্তি পাবেন। সিম ট্রের সাথে এর ডেডিকেটেড এসডি কার্ড স্লটে স্মার্টফোনটিতে ২৫৬ জিবি পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

ক্যামেরা

স্মার্টফোনটির আরেকটি আকর্ষণীয় দিক এর রিয়ার প্যানেলের ট্রিপল ক্যামেরা মডিউল। এই ট্রিপল ক্যামেরা মডিউলের মেইনে আপনি পাবেন একটি ১৩ মেগাপিক্সেল সনি সেন্সর। মেইন সনি সেন্সরের সাথে সেকেন্ডারি হিসেবে পাবেন একটি ৫ মেগাপিক্সেল অয়াইড এঙ্গেল সেন্সর। আর ডেপথ সেন্সিং এর জন্য সর্বশেষ পাবেন একটি ২ মেগাপিক্সেল সেন্সর। আর এই ফোনটিতে পাবেন বেশ কতগুলো শুটিং মোড।

ক্যামেরার লেন্সের ফোকাল লেন্থ এর অপর এর ছবির মান অনেকটা নির্ভর করে থাকে। এই ফোকাল লেন্থকে প্রকাশ করা হয় এপারচার দ্বারা। এপারচার নাম্বার যত ছোটো হবে ক্যামেরার ওপেনিং তত বড় হবে। আর এই ফোনটির ডুয়াল ক্যামেরা মডিউলে আপনি পাচ্ছেন এপারচার এফ২.০। যা আপনাকে অবজেক্টকে তুলনামূলক ভালো ফোকাস পয়েন্টে রেখে খুব দারুন কিছু ছবি তুলতে সহায়তা করবে।

ফ্রন্ট প্যানেলে সেলফি এবং সেলফ/ভিডিও কলিং এর জন্য পাচ্ছেন ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। সেলফি লাভারদের জন্য এটি সত্যিই এই দামে অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট। এতে থাকা বেশ কিছু শুটিং মোড ছবি এবং ভিডিওগ্রাফির ক্ষেত্রে আপানাকে বেশ ভাল কোয়ালিটি উপহার দিবে। আর ডে লাইটে তো দুর্দান্ত বটেই, লো-লাইটেও এর পারফর্মেন্স এই বাজেটের অন্য ফোনগুলোকে হার মানাতে সক্ষম।

ডিসপ্লে ও ডিজাইন

স্মার্টফোনটিতে পাবেন ৬.১ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির উপরে আপনি একটি ইউ শেপড নচ পাবেন। পুরো ব্রাইটনেসে সূর্যের সরাসরি আলো ব্যাতিত আর তেমন সমস্যা হবেনা। আর ডিসপ্লের কালার-কনট্রাস্ট লেভেল গুলোও চলনসই। ডিসপ্লেটির এস্পেক্ট রেশিও ১৯ঃ৯। আর এই ডিসপ্লেটির রেজুলেশন ১৫৬০*৭২০ পিক্সেল। স্মার্টফোনটিতে ভিউইং এঙ্গেলও যথেষ্ট ভালো এবং কালার শিফটিং একদম নেই বললেই চলে।

স্মার্টফোনটি সম্পূর্ণ প্লাস্টিক বিল্ডে তৈরি এবং যথেষ্ট সুন্দর। আপনি খুব সহজেই এক হাতে স্মার্টফোনটি অনায়াসে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। স্মার্টফোনটি বাজারে পাওয়া যাবে ৪টি কালারে, এগুলো হলঃ মিডনাইট সায়ান, পার্পেল, ব্ল্যাক এবং আমাদের আজকের রিভিউ করা ক্রিস্টাল স্কাই। তবে সবগুলো কালারের চাইতে ক্রিস্টাল স্কাই কালারটি আমাদের কাছে বেশি অনন্য মনে হয়েছে।

হাতে নিয়ে আপনার ডিভাইসটিকে বেশ হালকাই মনে হবে, কেননা এর ওজন মাত্র ১৭৩ গ্রাম। আর স্মার্টফোনটির রিয়ার প্যানেল কার্ভড হওয়ার ফলে হাতে খুব ভালোভাবেই গ্রিপ হবে। স্মার্টফোনটির অপরে পাবেন ৩.৫ এমএম হেডফোন জ্যাক, বাম পাশে পাবেন সিম কার্ড ট্রে, ডান পাশে পাওয়ার অন-অফ কি এবং ভলিউম রকার আর নিচে পাবেন একটি মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ও মাইক্রোফোন- স্পিকার গ্রিল।

পরিশিষ্ট

স্মার্টফোনটিতে যথেষ্ট ফাস্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, এবং মুহূর্তেই এটি ফিঙ্গার রিড করে যেকোনো একশন খুবি দ্রুতই সম্পন্ন করতে পারে । সম্পূর্ণ ফোনটি পরিচালিত হবে একদম লেটেস্ট এন্ড্রয়েড ১০ অপারেটিং সিস্টেমে, যারা স্টক এন্ড্রয়েডকে বেশি পছন্দ করেন তাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট, কেননা এতে আপনি স্টক ‘এন্ড্রয়েড ১০’ এর মজাটা খুব ভালোভাবেই পাবেন। সম্পূর্ণ ডিভাইসকে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য ওয়ালটন এতে দিয়েছে ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি, যা দিয়ে মোটামটি ভালভাবে ব্যবহার করেও স্মার্টফোনটি দিয়ে পুরো দিনের ব্যাকআপ পাওয়া যাবে অনায়াসেই।

ওয়ালটনের অন্যসকল স্মার্টফোনের মতই এই ‘প্রিমো এইচ৯ প্রো’ এও পাবেন ১ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি এবং ৩০ দিনের রিপ্লেস্মেন্ট গ্যারান্টি।

আপনি যদি ৯ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকার ভেতর ভালো একটি স্মার্টফোন খোঁজেন, তবে এই প্রিমো এইচ৯ প্রো এর কথা অবশ্যই ভেবে দেখতে পারেন। এই দামের হিসেবে স্মার্টফোনটিতে যা যা পাওয়া যাচ্ছে তাকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। এর ৪ জিবি র‍্যাম স্পেসিফিকেশন, তুলনামুলক ভালো চিপসেট, দারুন ক্যামেরা, ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি অবশ্যই আপনার কষ্টের টাকার মূল্য রাখবে।