অফিস থেকে শুরু করে নিজের বাসস্থান ‘এয়ার কন্ডিশনার’ তথা এসি যেন একটি অবিচ্ছেদ্য ইলেকট্রনিক্স এপ্লায়েন্স। তবে একটি এসি কেনা মোটেও সহজ কোন কাজ নয়। এসির মত একটি উচ্চ বৈদ্যুতিক যন্ত্র কেনার আগে আমাদেরকে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়।
আমরা যে এসিটি কিনছি তা আমদের জন্য পর্যাপ্ত কিনা তা মাথায় রাখা অতীব জরুরী। যেমন, ১২০-১৪০ (ঘর ভেদে এখনে কিছুটা তারতম্য হতে পারে) স্কয়ারফিট কিংবা এর চেয়ে ছোটো ঘরের জন্য ১ টনের একটি এসি অনায়াসে কাজ করবে, কিন্তু এর থেকে বেশি হলে আপনাকে ১.৫ টন কিংবা ২ টনে যেতে হবে।
এসি কতটা বিদ্যুৎ খরচ করবে তা বিবেচনা করে এসি কেনাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আমাদের সবসময় এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত, আমরা যে এসিটি কিনছি তা যেন সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ খরচ করে তাঁর সর্বোচ্চ কুলিং ক্ষমতা দেয়, এতে বিদ্যুৎ অপচয় কম হবে, পাশাপাশি আমাদের কাজটিও হবে।
তাছাড়াও এসিটি কতটা নয়েস, তথা শব্দ সৃষ্টি করছে এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসির শব্দ একটা সময় গিয়ে তীব্র বিরক্তির কারন হয়। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেই এসিটি কিনব তা যেন কম থেকে কম শব্দ উৎপন্ন করে। এর পাশাপাশি আছে, এসি কতটা দ্রুত ঘর ঠান্ডা করছে, এসিটি কি রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করছে ইত্যাদি বিষয়।
তো এই আর্টিকেলে আমরা বাজারের অন্যসব এসির তুলনায় ওয়ালটন এসি কেমন সেই বিষয়টি তুলনা করব। আমরা এই ক্ষেত্রে ওয়ালটন এর রিভারাইন মডেলের WSI-RIVERINE-12A [Smart] এসির সাথে বেশ কয়েকটি কোম্পানির এসি তুলনা করব।
Brand | General | Samsung | Carrier | Walton |
Model | General ASGA-12FNTA – Split AC – 1 Ton | Samsung 1 Ton AR12J | Carrier 1 Ton Spit AC – 42KHA012FS | WSI-RIVERINE-12A [Smart] |
Inverter | No | Yes | No | Yes |
BTU | 12000 (1 Ton) | 12000 (1 Ton) | 12000 (1 Ton) | 12000 (1 Ton) |
Input Power | 1210 Watt | 1348 Watt | 1256 Watt | 1170 Watt |
Compressor Type | Rotary | Rotary (Inverter) | Rotary | Rotary (Inverter) |
Refrigerant | R-410A | R-22 | R-410A | R-32 |
Price | 55,000 | 61,000 | 50,000 | 47,500 |
উপরে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো যে, জেনারেল এবং কারিয়ার এর এসিতে আমরা ইনভার্টার সুবিধা পাচ্ছিনা, তবে এর চাইতে তুলনামুলক কম দাম তথা ৪৭,৫০০ টাকায় ওয়ালটনের রিভারাইন মডেলের এসিটিতে আমরা আমরা ইনভার্টার প্রযুক্তি পেয়ে যাচ্ছি। নন-ইনভার্টার এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সার্কিট অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। এখানে এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হওয়ার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় এলে এসির কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। আবার ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলে, তখন চালু হয়।
যদি এসির ইনপুট পাওয়ারের কথা চিন্তা করি, তবে জেনারেল, স্যামসাং এবং ক্যারিয়ারে যথাক্রমে এই মান হল ১২১০, ১৩৪৮ এবং ১২৫৬ ওয়াট। তবে ওয়ালটনের রিভারাইন মডেলের এই এসিতে ইনপুট ভোল্টেজ ১১৭০ ওয়াট। সুতরাং তালিকার এসিগুলো থেকে ওয়ালটন এসিই বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
এভাবে বারবার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ার কারণে, এসি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। তার ঠিক বিপরীতে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরে ঘরের পরিবেশের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটির কম্প্রেসর নিয়ন্ত্রণ করে শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে।
যেহেতু গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত বৈশ্বিক সমস্যার জন্য অন্যতম দায়ী এসির মত ইলেকট্রনিক্স এপ্লায়েন্স, তাই এসিতে সঠিক এবং পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও বিবেচনার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস এর আরেকটি নিয়ামক মাত্রা হল GWP, তথা গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল মান। GWP মান যত কম হবে এসিটি বাতাসে তত কম তাপ উৎপন্ন তথা কার্বন নিঃসরণ করবে ।
আগে সিএফসি গ্যাস ব্যবহার করা হত, তবে পরিবেশ নিয়ে ভাবে এমন সকল উৎপাদনকারী কোম্পানি সিএফসি থেকে বের হয়ে এইচএফসি রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করতে শুরু করেছে। আজকের তালিকার দুটি এসি তথা জেনারেল এবং ক্যারিয়ার এর এসিতে ব্যবহার করা হয়েছে R-410A রেফ্রিজারেন্ট, এটিও এইচএফসি আর এটির GWP মান ২০৯০। অন্যদিকে ওয়ালটনের রিভারাইন মডেলএর এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে R-32 রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস, এটির GWP মান ৬৭৫। সুতরাং, জেনারেলের তুলনায় ওয়ালটনের এসিটি বেশি পরিবেশবান্ধব।
Samsung AR12J মডেলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে R-22 রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। এই R-22 রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসের তুলনায় আবার R-410A রেফ্রিজারেন্ট তুলনামুলক বেসি সাশ্রয়ী, তাপ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন; সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব। আবার এই R-410A রেফ্রিজারেন্ট থেকেও বেশি পরিবেশবান্ধব এবং তাপ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন হচ্ছে R-32 রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস, সুতরাং আপনি বুঝতেই পারছেন আশাকরি।
তাছাড়াও আইওটি বেজড হওয়ার ফলে ওয়ালটনের এসিটি অ্যাপ দিয়ে যেকোনো স্থান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে । এই আর্টিকেলে ১টনের বাইরের দেশের বিভিন্ন এসির দামের কাছাকাছি ওয়ালটনের রিভারাইন মডেলের একটি ১টনের এসি তুলনা করা হয়েছে। তো আশাকরি এই আর্টিকেলটি আপনার পরবর্তী এসি কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সহায়তা দেবে। আসুন আর দেশের অর্থ বাইরে না পাঠিয়ে মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যতে নিজেদের সম্পৃক্ত করে দেশের সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখি।