এয়ার কন্ডিশনার বা এসি বিক্রিতে রেকর্ড করেছে ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। চলতি বছরে বাংলাদেশের বাজারে ৮২ হাজার ইউনিট এসি বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ওয়ালটন। দুই মাস বাকি থাকতেই এসি বিক্রির টার্গেট ছাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮ সালের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৯৩ শতাংশ বেশি এসি বিক্রি হয়েছে তাদের। গবেষণার মাধ্যমে এসির মান শীর্ষে নিয়ে যাওয়ায় ওয়ালটনের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। প্রায় ২২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে দেশের এসি বাজারে এখন শীর্ষে ওয়ালটন।

এসি বিক্রির লক্ষ্য অর্জন উপলক্ষে বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজন করা হয় ‘এসি সেলস অ্যাচিভমেন্ট সেলিব্রেশন’ প্রোগ্রামের। এ আয়োজনে কাটা হয় বিশাল কেক। উন্মুক্ত করা হয় ১ টনের নতুন মডেলের স্মার্ট ইনভার্টার স্প্লিট এসি। পাশাপাশি এসি বিক্রিতে বিশেষ অবদান রাখায় ৩৩ জন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।

নতুন মডেলের এসি উন্মোচনের পর পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম নুরুল আলম রেজভী, পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম এবং মাহবুব আলম মৃদুল।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- নির্বাহী পরিচালক এবং বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রিজওয়ানা নিলু, নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক সরকার, এস এম জাহিদ হাসান, মো. হুমায়ূন কবীর, তানভীর রহমান, এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন), মো. রায়হান, আমিন খান, ড. সাখাওয়াত হোসেন, উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন‌্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহজাদা সেলিম, অপারেটিভ ডিরেক্টর রবিউল আলম ভুঁইয়া, অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর খোন্দকার শাহরিয়ার মুরশিদ, ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর মফিজুর রহমান, ওয়ালটন এসির গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সন্দীপ বিশ্বাস, এসি সেলস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম, প্রোডাক্ট ম্যানেজার মাহফুজুল আলম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ওয়ালটন এসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. তানভীর রহমান জানান, ওয়ালটন এসির রয়েছে শক্তিশালী আরঅ‌্যান্ডডি (গবেষণা ও উন্নয়ন) টিম। যেখানে দক্ষ ও মেধাবী প্রকৌশলীরা প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে ক্রেতাদের চাহিদা, রুচি, ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বশেষ প্রযুক্তি ও ফিচারের এসি উপহার দিচ্ছেন। এর ফলে ওয়ালটন এসির চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুতে ওয়ালটন এসির মাত্র ১০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ছিল। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রায় ২২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে দেশের এসি বাজারে শীর্ষে ওয়ালটন। আন্তর্জাতিক মানের ওয়ালটন এসি রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

তিনি আরো জানান, খুব শিগগিরই মাল্টি স্প্লিট এসি বাজারে ছাড়ছে ওয়ালটন। এর ফলে একই আউটডোর থেকে একাধিক ইনডোরের মাধ্যমে পুরো বাড়ি বা ফ্ল্যাটের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এছাড়া, ৪-৫ টনের ভিআরএফ এসিতে ইনভার্টার প্রযুক্তি সংযোজন করছে ওয়ালটন।

নতুন ১ টনের এসি সম্পর্কে সন্দীপ বিশ্বাস জানান, এই এসিতে সংযোজিত হয়েছে ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসর। ফলে তা ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা বুঝে সেই অনুযায়ী রেফ্রিজারেন্ট সরবরাহ করে। ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে কম্প্রেসর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা সরবরাহ করে বলে এতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। কম্প্রেসরের স্থায়িত্বও বাড়ে। এসি চালুর সময় তুলনামূলক কম শব্দ উৎপন্ন করে। এতে আছে টার্বোমুড, যা রুমের তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে এনে রুমকে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করে। ১ টনের এসির কম্প্রেসরে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বস্বীকৃত সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব আর৩২ রেফ্রিজারেন্ট। রয়েছে আয়োনাইজার প্রযুক্তি। যা ঠান্ডা করার পাশাপাশি রুমের বাতাসকে ধুলো-ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত করে। এর কন্ডেন্সারে ব্যবহার করা হচ্ছে মরিচারোধক গোল্ডেন ফিন কালার প্রযুক্তি। যার ফলে এই এসি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী।

তিনি আরো জানান, নতুন আসা ১ টনের এসিতে রয়েছে স্মার্ট কন্ট্রোল। ফলে এটি ভয়েস কমান্ড ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। অর্থাৎ ‘ভয়েস কন্ট্রোল’ বা ‘অ্যামাজন ইকো’র মাধ্যমে রিমোট কন্ট্রোল ছাড়াই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাড়ানো, কমানো, চালু বা বন্ধ করা যাবে।

জানা গেছে, অনলাইনে দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে কাস্টমার ডাটাবেজ তৈরি করছে ওয়ালটন। এ উপলক্ষে চলছে ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-৫। এর আওতায় ক্রেতাদের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনে উদ্বুদ্ধ করতে এসিতে ১২ বছরের বিদ্যুৎ বিল ফ্রিসহ নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ওয়ালটন এসিতে রয়েছে ফ্রি ইন্সটলেশনসহ বিভিন্ন অংকের নিশ্চিত ক্যাশব্যাক।

এসব সুবিধার পাশাপাশি যেকোনো ব্র্যান্ডের পুরনো এসির বদলে ২৫ শতাংশ ছাড়ে ওয়ালটনের নতুন এসি কেনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৯০০ টাকা ডাউন পেমেন্টে ৩৬ মাসের সহজ কিস্তির সুবিধা, জিরো ইন্টারেস্টে ১২ মাসের ইএমআই (ইক্যুয়াল মান্থলি ইনস্টলমেন্ট), ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি এবং টুইন-ফোল্ড ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরে ১০ বছরের গ্যারান্টি।

স্প্লিট এসি ছাড়াও ৪ ও ৫ টনের সিলিং ও ক্যাসেট টাইপ এসি উৎপাদন এবং বাজারজাত করছে ওয়ালটন। পাশাপাশি, শিল্প-কারখানা, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবনসহ মাঝারি ও বড় আকারের স্থাপনার জন্য ১৭ এবং ২৫ টনের ভিআরএফ (ভেরিয়্যাবল রেফ্রিজারেন্ট ফ্লো) এসি তৈরি করছে তারা।

ওয়ালটনের প্রতিটি এসি আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব নাসদাত-ইউটিএস থেকে মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়ের পর বাজারজাত করা হচ্ছে। দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। যার আওতায় ৭২টি সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমে বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে ওয়ালটন।