ইদানিং বিভিন্ন ধরণের কাজ ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেড়েছে কম্পিউটারের ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে পিসি গেমিং। কিন্তু সাধারণ কম্পিউটারে সব ধরণের গেম খেলা সম্ভব হয় না। হাই-কোয়ালিটি গেম খেলার জন্য প্রয়োজন হয় উন্নত মানের গেমিং গ্রাফিক্স কার্ড। তাছাড়া অনেকেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরণের গ্রাফিক্সের কাজ, ভিডিও এডিটিং এর কাজ করে থাকেন। সেসব ক্ষেত্রেও গ্রাফিক্স কার্ড একটি অপরিহার্য উপাদান।

গ্রাফিক্স কার্ড কি?

গ্রাফিক্স কার্ড হচ্ছে এক ধরণের ভিডিও প্রসেসর যা আপনার মাদারবোর্ডে সংযুক্ত থেকে পিসির প্রসেসরের সাথে মিলে কাজ করে ও মনিটরে দেখানোর জন্য আউটপুট ইমেজ তৈরী করে। ফলে কম্পিউটারে গ্রাফিক্স সম্পাদনার কাজ হয় আরো দ্রুত গতিতে। একে ভিডিও কার্ড, ডিসপ্লে কার্ড, ডিসপ্লে এডাপ্টার বা গ্রাফিক্স এডাপ্টারও বলা হয়। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, উন্নত মানের একটি গ্রাফিক্স কার্ড আপনার কম্পিউটারকে করতে পারে আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর।

গ্রাফিকস কার্ডের সুবিধা

আপনি কি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, পিসি গেমার কিংবা অ্যাডভান্সড কম্পিউটার ইউজার? তাহলে এই কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে আপনার কম্পিউটারে একটি ভালো গ্রাফিক্স কার্ডের কোনো বিকল্প নেই। গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া কম্পিউটারে গ্রাফিক্স বা ভিডিও এডিটিং এর কাজ করার বড় বড় সফটয়্যারগুলো যেমন- ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, অটোক্যাড, থ্রিডি ম্যাক্স, মায়া প্রভৃতিতে কাজ করাটা একেবারেই অসম্ভব। সেরা একটি গ্রাফিক্স কার্ড আপনার কাজকে করে তুলবে আরো গতিশীল, আরো নিখুঁত। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং গ্রাফিক্সের কাজ করেন, তাদের কাজের মানের অনেকটাই নির্ভর করে গ্রাফিক্স কার্ডের পারফর্ম্যান্সের ওপর।

আপনি যদি একজন রেগুলার পিসি গেমার হন কিংবা হারিয়ে যেতে চান হাই-ডেফিনেশন গেমের মায়াবী রাজ্যে – একটি উচ্চ ক্ষমতার গ্রাফিক্স কার্ড আপনাকে দিতে পারে চমৎকার গেমিং অভিজ্ঞতার অনন্য স্বাদ। এছাড়া আজকাল গ্রাফিক্স কার্ড এর সাথে ইন্টিগ্রেটেড সাউন্ড ডিভাইস থাকে। ফলে ভিডিওর পাশাপাশি পাওয়া যায় দারুণ অডিও আউটপুটও। সেই সাথে একাধিক মনিটরে একসাথে কাজ করা, কম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসরের উপর থেকে চাপ কমিয়ে পিসিকে আরো দ্রুত করা- প্রভৃতি সুবিধাও পাওয়া যায় একটি উচ্চগতির গ্রাফিক্স কার্ডের কাছ থেকে।

গ্রাফিকস কার্ডের প্রকারভেদ

গ্রাফিক্স কার্ড মূলত দুই প্রকারের হয়- ১) ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড (যা কম্পিউটারের সিপিউর মাদারবোর্ডে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে) ও ২) ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড (উচ্চ ক্ষমতার গ্রাফিক্স কার্ড, যা মাদারবোর্ডে আলাদাভাবে লাগানো যায়)। কম্পিউটারে একেবারে সাধারণ কাজ যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, মুভি দেখা বা ছোট ছোট গেম খেলার জন্য ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হয় না। কারণ এখন প্রায় সব কম্পিউটারেই বিল্ট-ইন ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড সংযুক্ত থাকে। কিন্তু গ্রাফিক্সের ভারী কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনার এনভিডিয়া গ্রাফিক্স কার্ড এর মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেরা ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন পড়বে। এই আলোচনায় আমরা মূলত ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড নিয়েই আলোচনা করবো।

গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে ভাবতে হবে

কম্পিউটারের ভালো পারফর্ম্যান্সের জন্য একটি ভালো গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কিন্তু কোন গ্রাফিক্স কার্ড ভাল তার চেয়ে কোন বিষয়গুলো একটি ভালো গ্রাফিক্স কার্ডের সক্ষমতা নির্ধারণ করে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। না জেনেবুঝে যেকোন একটা গ্রাফিক্স কার্ড কিনলেই সেটা আপনার পিসির কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে এমন ভাবাটা ঠিক নয়। তাই দেখেশুনে বিভিন্ন বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড কেনা উচিৎ।

চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ভালো গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে কি কি বিষয় মাথায় রাখা দরকার-

চিপসেট
গ্রাফিক্স কার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – চিপসেট। একটা গ্রাফিক্স কার্ড কতটা শক্তিশালী তা নির্ভর করে চিপসেটের উপর। চিপসেট মুলত পিসির সাথে গ্রাফিক্স কার্ড এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও মেমরির মাঝে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। চিপসেট প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আগের চেয়ে শক্তিশালী চিপ তৈরী করছে- তাই কেনার আগে বাজেট অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত লেটেস্ট চিপসেটের গ্রাফিক্স কার্ড পছন্দ করার চেষ্টা করবেন।

ক্লকস্পিড
গ্রাফিক্স কার্ড এর রয়েছে নিজস্ব জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) যার কর্মদক্ষমতা ক্লক স্পিডে পরিমাপ করা হয়। জিপিইউ প্রতি সাইকেলে কতগুলো পিক্সেল প্রসেস করতে পারে তার পরিমাণকে মেগাহার্টজ একক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ ক্লক স্পিড যত বেশি হবে, গ্রাফিক্স কার্ড এর ক্ষমতাও তত বাড়বে।

অনবোর্ড মেমরি
সাধারণত গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে যেই মেমরি সংখ্যাটা (যেমন- ১ জিবি, ২ জিবি) উল্লেখ করা থাকে সেটাই হচ্ছে ঐ কার্ডের অনবোর্ড মেমরি। অনেকেরই একটা ভুল ধারণা থাকে যে অনবোর্ড মেমরি বেশি হলেই বোধহয় গ্রাফিক্স কার্ড বেশি শক্তিশালী হবে। কথাটা পুরোপুরি মিথ্যা না হলেও গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে চিপসেট ও ক্লকস্পিড আরো বেশি ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে অবশ্যই তুলনামূলক আপডেটেড মেমরি টাইপ (DDR2, DDR3, GDDR3 প্রভৃতি) দেখে কিনবেন।

বাস স্পীড
প্রসেসর একবারে কতটুকু ডাটা নিয়ে কাজ করবে তার পরিমান হচ্ছে বাস। বাস স্পিড বেশি হলে খুব দ্রুত আউটপুট পাওয়া যাবে। আবার বাস স্পিড খুব বেশি হলে পাওয়ার খরচের পরিমানও বেড়ে যাবে। তাই দেখেশুনে আপনার জন্য সেরা বাস স্পিডের গ্রাফিক্স কার্ডটি বেছে নিন।

ট্রানজিস্টর সংখ্যা
কার্ডে যত বেশি ট্রানজিস্টর থাকবে- নয়েজ লেভেল তত কম হবে ও ভিডিও ভালোভাবে ফিল্টার হবে। তাই গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে এর প্রতি মনযোগী হন। কারণ ভিডিও ফিল্টার ভালো না হলে মনিটরে কাঙ্ক্ষিত আউটপুট পাওয়া যাবে না।

কুলিং সিস্টেম
গ্রাফিক্স কার্ডের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুলিং সিস্টেম। উচ্চ ক্ষমতার গ্রাফিক্স কার্ড বেশি শক্তি ব্যয় করে বলে দ্রুত গরম হয়ে যায়। তাই একে ঠান্ডা রাখার জন্য দরকার উন্নত কুলিং সিস্টেম। তা না হলে গ্রাফিক্স কার্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পাওয়ার সাপ্লাই
অনেক গ্রাফিক্স কার্ডই আলাদা পাওয়ার সাপ্লাই চায়। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পাওয়ার সাপ্লাই পরিবর্তন করতে হবে। কারন যদি আপনার কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই এর ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় কম হয় তাহলে আপনি গ্রাফিক্স কার্ড এর পুরো শক্তিকে কাজে লাগাতে পারবেন না।

এছাড়া গ্রাফিক্স কার্ডের ডিসপ্লে আউটপুট, মেমোরি ব্যান্ডউইথ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রেখেও পছন্দ করতে হবে আপনার কম্পিউটারের জন্য সবচেয়ে সেরা গ্রাফিক্স কার্ডটি।

তো আর দেরি নয়, সেরা ফিচার আর বাজেটের মেলবন্ধন ঘটান এখনই। দারাজ অনলাইন শপে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং মেলা ১১.১১ সেল। সেরা দামে কম্পিউটার গ্রাফিকস কার্ড, মাদারবোর্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য ঘরে বসে কিনে নিতে চাইলে দারাজ ১১.১১ সেল এর বিকল্প কোথায়!