এইতো, কিছুদিন আগেও অনলাইন আয় মানেই বিদেশ ভিত্তিক চিন্তা ভাবনা ছিল। কিন্ত সেই ভাবনার দিন সম্ভবত শেষের দিকে চলে এসেছে। ভাবছেন যে, সেটা কিভাবে সম্ভব? চলুন জেনে নেই, যেভাবে খুলে গেল বাংলাদেশে অনলাইন আয়ের দুয়ার!
অনলাইন আয় সম্পর্কে যাদের ধারণা অস্পষ্ট। তাদের জন্য সহজ কথায় বলে রাখি, ইন্টারনেট ভিত্তিক যেকোন ইনকামকেই আমরা অনলাইন আয় বলে থাকি। আরও জানিয়ে রাখি, অনলাইনে আয়ের শত শত বৈধ/অবৈধ উপায় রয়েছে। অবৈধ বলছি কেন? একটি উদাহরণ দেই, ইন্টারনেটে অনেক বেটিং ওয়েবসাইট আছে, যেগুলোতে খেলা নিয়ে বাজি ধরেও প্রচুর ইনকাম করতে পারেন। যদিও সেগুলোর বৈধতা রয়েছে অনলাইনে। কিন্ত আমাদের দেশীয় চিন্তাধারায় কিন্ত সেই পথ অবৈধ। এরকম কয়েক শত অবৈধ পথ রয়েছে অনলাইন জগতে ইনকাম করার। যাক সেদিকে না যাই। এবার আসি গতানুগতিক কিছু মাধ্যমে। যে মাধ্যম গুলো ব্যবহার করেই কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশে অনলাইন আয়ের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। যেমনঃ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইনের মত অনেক আইটি ভিত্তিক কাজ করে দেওয়া, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ব্লগিং, ইউটিউবিং ইত্যাদি।
কিন্ত এতদিন ঐসব কাজের সেক্টরগুলো বলতে গেলে সবগুলোই বিদেশ নির্ভর ছিল। যেমনঃ আইটি সার্ভিসগুলোর দেশীয় বাজার তেমন ভাল ছিল না। তাই গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসে জব পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। আবার ধরুন, আপনি লেখালেখি করতে ভালোবাসেন? কিন্ত ইংরেজিতে লেখালেখিতে দক্ষ না। সেটাও বাঁধা হয়ে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই দুয়ারটা সম্ভবত খুলে গেছে। যার কারণে আমাদের বাংলাদেশ ভিত্তিক কাজগুলোকেই সবাই বেছে নিচ্ছে অনলাইন আয়ের মাধ্যম হিসেবে। বিষয়টি আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ইতিবাচক দিক হিসেবেই উঠে এসেছে। এরকমই ৩টি মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করব আজকের পোস্টে। যে মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তো চলুন জেনে নেয়া যাকঃ
১। ইউটিউব
ইউটিউব সম্পর্কে বলতে গেলে বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইন আয়ের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে ইউটিউব। মোটা অংকের আয়ের পাশাপাশি মানসম্মত ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলা যায় বলেই ইউটিউব -কে বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে, দেশীয় বাংলা কন্টেন্টের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় ইউটিউবাররা এখন নিজ ভাষাতেই ভিডিও কন্টেন্ট বানানোতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ফলে ইউটিউব থেকে আয়ের পথ বাংলাদেশে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ হয়েছে। বছরখানেক আগে বাংলায় ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে আয় করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাই ঐ সময় দেশীয় ইউটিউবারদেরকে বিদেশী কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে হত। ফলে অনেকেই সেসময় ইউটিউবকে আয়ের পথ হিসেবে নিয়ে খুব একটা সফলতার দেখা পান নি। বর্তমানে ইউটিউবে বাংলা কন্টেন্টের চাহিদাটা এতোটাই ইতিবাচক যে, অনেকেই ফুল টাইম প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছে ইউটিউব কে। মানসম্মত কন্টেন্ট সমৃদ্ধ একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপনি মাসে মিনিমাম ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে, মানসম্মত কন্টেন্ট এবং ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। স্টুডেন্টদের জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি ইউটিউবিং করে বেশ ভালো অংকের অর্থ আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
২। ব্লগিং
ব্লগিং বিষয়টার সাথে এখনও অধিকাংশ মানুষজনই অপরিচিত। সংক্ষেপে ব্লগিং বলতে, অনলাইনে লেখালেখি করাকেই বুঝায়। আপনারা অনেকেই জানেন, ব্লগিং করেও মাসে প্রচুর আয় করা সম্ভব। সেই পথটা বাংলাদেশীদের জন্য আরও বেশী সুগম করে দিয়েছে গুগল অ্যাডসেন্স। গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে বিশ্বসেরা টেক জায়ান্ট গুগলের অনলাইন বিজ্ঞাপন সংস্থা। তাঁরা অন্যের ওয়েবসাইট/ব্লগ সাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের মালিককে অর্থ আয়ের সুবিধা দেয়। কিন্তু, ২ মাস আগেও বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশের অনুমোদন ছিল না গুগল অ্যাডসেন্সের। অবশেষে সেই দুয়ার খুলে চলতি বছরের গত ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে। বাংলা ভাষা ভিত্তিক কন্টেন্ট ও ওয়েবসাইটের চাহিদা বাড়ার কারণেই এমন ঘোষণা দেয় গুগল। তাই, আপনার যদি বাংলা কন্টেন্ট লেখালেখিতে আগ্রহ থাকে, চাইলেই একটি ব্লগসাইট/ওয়েবসাইট খুলে লেখালেখি শুরু করে দিন এবং গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে মনিটাইজ করে মাস শেষে আয় করুন ভালো অংকের অর্থ। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের দেড় কোটি ওয়েবসাইটের পাবলিশাররা গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঐ বছরে গুগল তাঁর পাবলিশারদেরকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পেমেন্ট দিয়েছে।
৩। আইটি প্রডাক্ট/সার্ভিস বিজনেস
আইটি সেক্টরে আপনার ভালো দক্ষতা আছে? যেমন ধরুন, ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন? কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ? আপনার জন্য এখন দেশেই রয়েছে ভালো চাহিদা। এতদিন আইটি এক্সপার্টদেরকে অনলাইনে গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসে অনেক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে বহু কষ্টে কাজ পেতে হত। কিন্তু দেশে এখন ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ায় সেই হারে বেড়েছে ইনফরমেশন টেকনোলজি ভিত্তিক বিভিন্ন সার্ভিসেরও চাহিদা। তাই আপনি চাইলেই আপনার আইটি স্কিলকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে পারেন আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী ছোট/বড় কিংবা মাঝারি যেকোন আইটি সার্ভিস এন্ড সল্যুশনস প্রতিষ্ঠান। একটি উদাহরণঃ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। ফলে অনেকেই ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ফেসবুকে অ্যাডভারটাইজিং সেবাটি দিচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে ওয়েব হোস্টিং বিজনেসও অনেক জনপ্রিয়! এভাবেই আপনি আপনার যেকোন আইটি স্কিল এখন দেশীয় বাজারেই কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। সেটিও বলতে গেলে অনলাইন আয়ের মধ্যেই পড়ে। এছাড়াও অনেকেই এখন ঘরে বসেই বিভিন্ন আইটি প্রডাক্ট বা গেজেট বিক্রির অনলাইন শপ গড়ে তুলে আয় করছে।
বাংলাদেশেই অনলাইন আয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা!
সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়-বানিজ্যের প্রসার ঘটছে। কমছে বেকারত্ব। আর সেখানে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। তাই এখন অনলাইন আয়ের জন্য আর বিদেশ নির্ভরতা নয়! দেশেই খুলে যাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক আয়ের নতুন নতুন সম্ভাবনা। তাই প্রস্তুত হোন, বেকারত্বহীন আগামীর বাংলাদেশের জন্য!
লেখাটি আমার ব্যক্তিগত ব্লগ “Spark Maruf” -এ প্রথম প্রকাশিত…