মোবাইল ফোন অপারেটর এয়ারটেল তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি (থ্রিজি) নেটওয়ার্ক দ্রুত সম্প্রসারণ করছে। এরই মধ্যে রাজধানীর ৫০ শতাংশ এলাকায় এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব প্ল্যানিং শাহরিয়ার রাশেদ।তিনি বলেন, এয়ারটেল দেশজুড়ে থ্রিজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কাজ করছে। এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচিত বেশ কিছু এলাকায় এবং পুরো সিলেট জুড়ে এয়ারটেলের থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এয়ারটেল বাংলাদেশের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস টবিট বলেন, ‘এ খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, যোগাযোগ ও জ্ঞান আহরণের সেতুবন্ধ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে থ্রিজি। এ ছাড়া থ্রিজি বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও ভূমিকা রাখবে।’
মোবাইল অপারেটরগুলো বলছে, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবা চালু হয়েছে। বাংলাদেশে চালু হয়েছে থ্রিজি। তবে অপারেটররা বলছে, থ্রিজির লাইসেন্সেই ফোরজি এবং লং টার্ম ইভ্যুলেশন (এলটিই) প্রযুক্তির সেবা দিতে পারবে তারা।
ফোরজি প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘দেশে বর্তমানে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি (থ্রিজি) চালু হয়েছে। তবে শিগগিরই বাংলাদেশ ফোরজিতে চলে যাবে। প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল, প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসছে। আর উন্নত দেশগুলো এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক দূর এগিয়েছে। আমরাও শিগগিরই দেশে ফোরজি চালু করব।’
এয়ারটেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘থ্রিজির জন্য আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি থাকায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর পর এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ প্রযুক্তি চালু করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, এখন ঢাকার বারিধারা, গুলশান ১ ও ২, বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, তেজগাঁও, লালমাটিয়া, কলাবাগান, পান্থপথ, হাতিরপুল, মিরপুর, উত্তরা, শেখের টেক, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, স্টেডিয়াম মার্কেট, বসুন্ধরা, পল্টন এলাকা, এয়ারপোর্ট রোড, মিরপুর সেনপাড়া, মতিঝিল, গুলিস্তান, কাকরাইল, রামপুরাসহ বেশ কিছু এলাকায় এয়ারটেলের থ্রিজি সেবা সম্প্রসারিত হয়েছে।
এদিকে সিলেটের নারসিং টিলা, জিন্দাবাজার, সুবিদবাজার, মজুমদারপাড়া, মদনমোহন কলেজ, সিলেট এম এ জি ওসমানী স্টেডিয়াম, সিলেট পুলিশ লাইন, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট ওমেন্স মেডিকেল কলেজ, আম্বরখানা, হজরত শাহজালাল মাজার, মদিনা মার্কেট, শাহজালাল উপশহর, এমসি কলেজ, সিলেট প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হজরত শাহপরান মাজার, নাজিমগড় রিসোর্ট, খাদিমনগর, সিলেট সরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা, লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিয়ানি ব্রিজসহ নির্বাচিত প্রায় সব এলকাতেই থ্রিজি সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, জিইসি, সিইপিজেড, দামপাড়া, নাভাল অ্যাকাডেমি, টাইগার পাস, রিয়াজুদ্দীন বাজার, দেওয়ান হাট, দক্ষিণ হালিশহর, এয়ারপোর্ট, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, খুলশী, পাহাড়তলী, অলঙ্কার মোড়, সাগরিকা, স্টেডিয়াম, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, জামালখান, উত্তর হালিশহরসহ বেশ কিছু এলাকাতেই এ সেবা উপভোগ করছে গ্রাহকরা।
থ্রিজির জন্য সরকারের বরাদ্দ ৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের মধ্যে নিলামের মাধ্যমে গত ৮ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ মেগাহার্টজ কিনে নেয় দেশের চারটি অপারেটর; এর মধ্যে গ্রামীণফোন ১০ মেগাহার্টজ এবং রবি, এয়ারটেল ও বাংলালিংক ৫ মেগাহার্টজ করে মোট ১৫ মেগাহার্টজ। নিলামের প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) বিক্রি হয় ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের ১৪ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে থ্রিজি সেবা চালু করেছে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক।
থ্রিজি সেবা : থ্রিজির মাধ্যমে গ্রাহকরা মোবাইল ফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ভিডিও কল, জিপিএসের মাধ্যমে পথনির্দেশনা, টেলিমেডিসিন, মোবাইল ফোনেই টিভি দেখা, উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সেবা পাবে। এমনকি মোবাইলে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ কিলোবাইট ডাটা পাঠানো যাবে। থ্রিজি প্রযুক্তিতে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট-গতি বেড়ে যাবে বহুগুণ। টুজিতে ভয়েস আদান-প্রদানে গুরুত্ব দেওয়া হলেও থ্রিজিতে বেশি গুরুত্ব পাবে দ্রুততম সময়ে তথ্য বা ডেটা আদান-প্রদানে।
এ ছাড়া, দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি (টুজি) সেবার মাধ্যমে এত দিন আমরা মোবাইল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দৈনিক পত্রিকা বা গল্প-উপন্যাস পড়া, প্লেন, বাস অথবা ট্রেনের টিকিট কেনা, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পরামর্শ, কৃষিতথ্য, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফল, সর্বশেষ সংবাদ জানা, বাজারের দরদাম, সংক্ষিপ্ত বার্তা (এসএমএস) পাঠানো, মাল্টিমিডিয়া বার্তা (অডিও, ভিডিও), ইমেইল পাঠানো, চ্যাট ও ব্রাউজ করা, অনলাইন মার্কেট, ই-কর্মাস এসব সেবা পেলেও তা থ্রিজিতে এখন আরো সহজতর হবে। আগে একটি কাজ করতে যে সময় লাগত, এখন তা অন্তত আট থেকে দশ গুণ সময় কম লাগবে।