3G Internet

দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মধ্যে শুরু হচ্ছে থ্রিজির যুদ্ধ। টেলিটক, গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল ও বাংলালিংক—এ পাঁচ অপারেটরকেই থ্রিজির যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হচ্ছে খুব শিগগির। বিটিআরসির শর্ত অনুযায়ী, কোনো অপারেটর নয় মাসের মধ্যে সব বিভাগে সেবা চালু করতে না পারলে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আজ রোববার বিটিআরসির ডাকা মোবাইল ফোনের তরঙ্গ বরাদ্দের নিলামে অংশ নেয় দেশের চার মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল ও বাংলালিংক। মোবাইল অপারেটর সিটিসেল ‘আর্থিক সমস্যার’ কারণে জামানতের টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ নিলাম থেকে ছিটকে পড়ে।

আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলা হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত থ্রিজি নিলামের প্রথম দফায় ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের নিলামে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে গ্রামীণফোন। দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি (থ্রিজি) সেবার প্রথম নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম উঠেছে ১৬৩ কোটি টাকা (দুই কোটি ১০ লাখ ডলার)। এই হিসাবে গ্রামীণফোনকে পরিশোধ করতে হবে এক হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া একই দরে পাঁচ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ কিনছে অন্য তিন বেসরকারি অপারেটর বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। থ্রিজির নীতিমালা অনুসারে ১৫ বছরের জন্য এই লাইসেন্স পাচ্ছে অপারেটরগুলো। তবে কেউ আগ্রহী না হওয়ায় বিটিআরসির হাতে থাকা ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ অবিক্রীত থেকে গেছে।

থ্রিজির যুদ্ধে নামার আগে
যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর প্রয়োজনেই দেশে থ্রিজি সেবা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোও তাকিয়ে ছিল তীর্থের কাকের মতো। ২০১২ সালের পর থেকেই মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি ও সরকারের মধ্যকার দূরত্ব ও জটিলতা কমে আসতে থাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি মেগাহার্টজের তরঙ্গমূল্য দুই কোটি ডলার নির্ধারণ করে থ্রিজি লাইসেন্স নীতিমালা করে সরকার। থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দের নিলামে অংশ নিতে অপারেটরগুলোর আবেদনের শেষ দিন ছিল ১২ আগস্ট। বিটিআরসি থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দের লাইসেন্স মাসুল ১৫ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে ৫ শতাংশ করে। এ ছাড়া বিটিআরসির সঙ্গে রাজস্ব আয় ভাগাভাগির (রেভিনিউ শেয়ারিং) ওপর নির্ধারিত ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহার করা হয়। এ বিষয়গুলো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো থ্রিজি নিলামে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছিল। গত ১৮ আগস্ট বিটিআরসি আবেদনকারীদের তালিকা প্রকাশ করে। আর নিলাম-প্রক্রিয়া নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে অপারেটরগুলোর পরামর্শের দিন ছিল ১৯ আগস্ট। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা জামানত (আর্নেস্টমানি) জমা দেয় ২৬ আগস্ট।

সরকারের আয়
বিটিআরসি আজ রোববার মোট ৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের নিলাম ডেকেছিল। এর মধ্যে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও রবি—এই চার অপারেটর মিলে কিনেছে মোট ২৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম। থ্রিজির এ নিলাম থেকে সরকারের মোট আয় হবে চার হাজার ৮১ কোটি টাকা। অবিক্রীত ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিষয়ে সরকার পরে সিদ্ধান্ত নেবে। নিলামে অংশ নেওয়া সব প্রতিষ্ঠানকেই প্রথম কিস্তিতে ৩০ দিনের মধ্যে মোট টাকার ৬০ শতাংশ জমা দিতে হবে। বাকি টাকা ১৮০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। টাকা জমা দেয়ার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স পাবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

থ্রিজি যাবে হাতের নাগালে
রাষ্ট্রায়ত্ত মুঠোফোন অপারেটর টেলিটক ইতিমধ্যে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে থ্রিজি সেবা দিতে শুরু করেছে। থ্রিজি জনপ্রিয় করতে ইতিমধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। টেলিটকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল ও বাংলালিংক শিগগিরই নানা পদক্ষেপ নিতে পারে এবং এর ফলে মানুষের হাতের নাগালে আসতে পারে থ্রিজি-সুবিধা।
থ্রিজির নিলাম হওয়ায় এখন এ প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির (থ্রিজি) সেবা দেওয়ার জন্য এখন সব অপারেটর প্রস্তুত। থ্রিজির নিলাম হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি টেলিযোগাযোগ খাতে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় প্রযুক্তিসুবিধা পৌঁছানোর আশা করা যায় এখন।

থ্রিজির সুবিধা
থ্রিজির মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্ক-সুবিধা পাওয়ার যায়, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ১০ কোটির বেশি মুঠোফোন ব্যবহারকারী রয়েছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেকোনো স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই এই সুবিধার আওতায় পড়বেন। অবশ্য, থ্রিজির সুবিধা নির্ভর করছে এর খরচের ওপর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এখন একটাই চাওয়া, সাশ্রয়ী দামে থ্রিজি-সুবিধা।