বাংলা ভাষায় আরবী কেন নির্যাতিত?
[বি: দ্র: এটি আমি প্রথমে বিজয় ফন্টে টাইপ করেছি, তারপর সেখান থেকে ইউনিকোডে কনভান্ট করেছি, তাই ইউনিকোড ফন্ট একটি মাঝে মাঝে ভেঙ্গে গেছে, আপনি সঠিক ভাবে পড়তে চাইলে বিজয়তে করা পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারেন।]
ভাষা মানুষের একটি অমূল্য গুণ। আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত এই বাকশক্তির মাধ্যমে মানুষ সহজে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। আল্লা তা”আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর সেই কুদরতী দানকে স্মরণ করিয়া ইরশাদ করেন- “দয়ামত আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে অভিব্যক্তি প্রকাশ-বর্ণন শিক্ষা দিয়েছে।” (সূরাহ আর রাহমান, আয়াত নং ৩-৪)
পৃথিবীর একেক দেশের মানুষ এক এক ভাষায় কথা বলে। কেউ বাংলায়, কেউ আরবীতে, কেউ উর্দূতে, কেউ ইংরেজীতে প্রর্ভতি ভাষায় কথা প্রকাশ করে। আবার একেক ভাষায় রয়েছে বিভিন্ন রকম বাচন ভঙ্গি। এ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৈচিত্র্যের অংশ। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- “তোমাদের ভাষার বিভিন্নতায় রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন।”
আমরা বাংলাদেশী, বাংলা আমাদের ভাষা। তেমনি মুসলমান হিসেবে আরবী আমাদের ধর্মীয় ভাষা হবে একমাত্র আরবী। সেই হিসেবে আরবীকে আন্তর্জাতিক ও সার্বজনীন ভাষা বলা যায়।
বাংলাভাষায় অনেক বিষয় এমন রয়েছে-যে সম্পর্কে আমাদের পূর্ব পুরুষগণ সম্যক অবগত থেকে সেই আলোকেই বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু অধুনা সেসব বিষয়ে দৈন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বরবর্ণে ই ঈ এবং উ ঊ-এর উচ্চারণ সমপর্যায়ের শুধু পার্থক্য উচ্চারণের টানে। এ হিসেবেই ই-কে হ্রস্ব ই এবং ঈ-কে দীর্ঘ ঈ, তেমনি উ-কে হ্রস্ব উ এবং ঊ-কে দীর্ঘ ঊ বলা হয়। অর্থাৎ ই উ হচ্ছে হ্রস্বস্বরের বর্ণ এবং ঈ ঊ হচ্ছে দীর্ঘ স্বরের বর্ণ। আর এর ওপর ভিত্তি করেই হ্রস্ব-ই কার ( ি ) ও দীর্ঘ ঈ-কার ( ী ) প্রভৃতির প্রবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে ি (হ্রস্ব ই-কার) এবং ূ (হ্রস্ব উ-কার) স্বরচিহ্ন উচ্চারণ লম্বা না হওয়া বুঝায় আর ী (দীর্ঘ ঈ-কার) এবং ূ (দীর্ঘ ঊ-কার) স্বরচিহ্ন উচ্চারণ লম্বা করে বা টেনে পড়াকে নির্দেশ করে।
বাংলাভাষায় আপাতদৃষ্টিতে এর রহস্য অনেকের কাছে রহস্যই থেকে গেলেও বাংলাভাষায় আরবী শব্দের বানান বা উচ্চারণের ক্ষেত্রে এর সার্থক প্রয়োগ সুস্পষ্ট। এতে প্রতীয়মান হয়, আরবী ভাষার শব্দাবলীকে বাংলাভাষায় যথার্থরূপে লেখা ও উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে বাংলাভাষাযর এ লেখনরীতি সার্থক হয়েছে। এর ভিত্তিতেই আরবী ভাষার যে শব্দের উচ্চারণে মাদের হরফের কারণে লম্ব করার নিয়ম রয়েছে, তা দীর্ঘ স্বরের চিহ্ন ( ী / ূ ) দ্বারা যথাযথ ভাবে বুঝানো হয়।
তাজবীদের নিয়মে যাকে “হারকাতের উচ্চারণ টেনে পড়াকে মাদ বলে” নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি হ্রস্ব স্বরের চিহ্ন (ি / ু ) ব্যবহার করা হয়, তখন তা মাদের “হারকাতের উচ্চারণ তাড়াতাড়ি করতে হয়” নিয়মে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।
সুতরাং লিখতে বাংলায় অবশ্যই দীর্ঘ ঈÑকার ( ী ) ব্যবহার করে “রাহীম” লিখতে হবে মাদের হরফের কারণে। কিন্তু তাকে যদি “রাহিম” লিখা হয়, তাহলে সেই মাদের হরফকে বিলুপ্ত করে শব্দটিকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। আর অর্থের দিক দিকেও এ শব্দ দু’টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থবোধকঃ রাহীম অর্থ দয়াময় এবং রাহিম অর্থ রক্তসম্পর্কি আত্মীয়, অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে অনেক বার বলেছেন আমার কোন ভাই/বোন/বাবা/মা/আত্মীয়/স্বজন/ আমার কোন অংশীদার নেই, তাহলে এখন দেখুন আপনি তেলাওয়াত করতেছেন যে, আপনি আল্লাহর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়।
দুঃখজনক যে, অধুনা বাংলা ভাষার বানানে আধুনিকতার নামে আরবীর এ জাতীয় শব্দসমূহকে হ্র-ই কার দিয়ে লেখার নিয়ম করা হয়েছে। যেমনঃ মুফতি, সাহাবি, আরবি, বুখারি, হাদিস প্রভৃতি। অথচ শব্দগুলোর উচ্ছারণে মাদ রয়েছে। সে হিসেবে এগুলোর বানান লেখন হবে যথাক্রমে মুফতী, সাহাবী, আরবী, বুখারী, হাদীস প্রভৃতি। কিন্তু আধুনিক বানানের নামে এগুলোতে ি (হ্রস্ব-ইকার) ব্যবহারের মাধ্যমে এ শব্দগুলোকে মাদবিহীন বানিয়ে বিকৃত করা হয়েছে। যার কারণে শব্দের কাঠামো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অর্থের দিক দিয়ে এগুলো ভিন্ন অর্থবোধক হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
এভাবে কি বাংলাভাষায় আরবীকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলা হচ্ছে না? আরবীর ওপর এমনি খড়গ চালিয়ে বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে প্রকৃত পক্ষে অশুদ্ধই করে দেয়া হচ্ছে। যা কখনো কাম্য করে পারে না।
আরবী ভাষার স্বকীয়তাকে নষ্ট করার এ কুৎসিত তৎপরতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলা লিখনে ভাষার মাসে হোক আমাদের এ শুদ্ধতার অঙ্গীকার।
এটি পিডি এফ হিসেবে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
পিক্সটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
অসাধারন লিখেছেন ভাই । আমার ভাল লাগলো । ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকেও আমাদের সাথে থাকার জন্য। এবং সর্ব প্রথম মন্তব্য জানানোর জন্য।