মাজহাব শব্দের অর্থ – চলার পথ।
ইসলামি পরিভাষায় কোরআন – সুন্নাহর প্রদর্শিত,রাসুল,সিদ্দিক,শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের মনোনীত পথের নামই হল মাজহাব। অন্য অর্থে এটাই সিরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথ । সুতরাং,বুঝা গেল যে মাজহাব কোন নতুন ধর্ম,মতবাদ বা কোরআন সুন্নাহ বহির্ভূত ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব মতের নাম নয়। বরং মাজহাব হল কোরআন, সুন্নাহ,ইজমা ও কেয়াসের আলোকে বিভিন্ন ধর্মীয় সমস্যার প্রদত্ত সমাধান যা এ বিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ প্রদান করেছেন।
এই সংজ্ঞার আলোকে একথা বুঝা যায় যে, মাজহাব সঠিক হওয়ার জন্য রসূল সাঃ কোনো মাজহাবের অনুসারী হওয়া জরুরি না । কেননা মাজহাব হল , রাসুলের বক্তব্য গুলুর ব্যাখ্যা মাত্র। সুতরাং একজন লিখক কোন একটা বই লিখে যাওয়ার পর যদি কেউ তার ব্যাখ্যা গ্রন্থ লেখেন ,তাহলে এ বইয়ের ব্যাপারে এ প্রশ্ন তোলা যে,লিখক এ বই ( ব্যাখ্যা গ্রন্থ) পড়েছেন কিনা ? এটা যেমন অবান্তর ও মূর্খতা,মাজহাবের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলাও তেমন । কেননা কোন ইমাম ই রাসুলের কথার বাহিরে এক কদম ও দেননি । সুতরাং যেহেতু চার মাজহাবই ইসলামের মুল ৪ টি ভিত্তি তথা কোরআন ,সুন্নাহ, ইজমা, ও কিয়াসের আলোকে প্রণীত । আর এই ৪ টা ব্যাপারে রাসুলের ও সমর্থন ছিল । যা আমরা মুয়াজ রা” এর হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি। তাহলে মাজহাব মানার মানেই হল রাসুলের কথা মানা ।
এখানে একটা প্রশ্ন,হাদিস শরীফে মূলত পাওয়া যায় কুরআন –সুন্নাহ মানার কথা তাহলে মাযহাব মানার দরকার কি?
হাদিসের কথা অবশ্যই ঠিক । কিন্তু কুরআন –সুন্নাহর প্রত্যক্ষ –পরোক্ষ , সুস্পষ্ট –অস্পষ্ট ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ জটিল বিষয়ের যথাযথ সমাধান বের করে তা অনুসরণ করে মূল লক্ষে যাওয়া সকলের পক্ষে মোটে ও সম্ভবপর নয়। বরং এ সকল বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী ব্যক্তি বর্গের দেওয়া সমাধান মেনে চলেই মূল লক্ষ্যে যাওয়া সম্ভব।
এখানে অনেকে প্রশ্ন করেন, এক সময় বাংলায় কোরআন হাদিস ছিলনা তাই আমরা মুলুবিদের কথা মেনেছি। এখন আর দরকার নাই। কেননা বাংলায় কোরআন ও হাদিসের অনেক বই পাওয়া যায় । তাই আমরা এগুলু দেখে দেখে আমল করব।
এদের উত্তরে আমি প্রথমে বলবো ভাই দেখুন, আপনি হয়ত বাংলা পড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে লাখো মানুষ আছে যারা বাংলা পড়া দূরের কথা তারা তো ক,খ ই চিনেনা এদের কি হবে? দ্বিতীয়ত শুধু বই পড়েই সব জিনিসের সমাধান দেয়া যায়না । বিশেষ করে ঐ সকল জিনিস যে গুলুর জন্য রয়েছে কিছু নীতিমালা ও কোর্স , প্রশিক্ষণ । যেমন , ডাক্তারি বিষয়গুলু। বাংলায় এ বিষয়ে বইয়ের কোন অভাব নেই। বরং ফুটপাথেও পাওয়া যায়। অনুরূপ উকিলি, সংবিধান থেকে নিয়ে সকল আইনের বই কিন্তু কিনতে পাওয়া যায়। এখন বলুন তো কেউ একজন যদি এ বই গুলু কিনে এনে আগা –গোঁড়া মুখস্থ করে ফেলে এবং অনায়েসে বলতে পারে সরকার কি তাকে ডাক্তার / উকিল হিসেবে সার্টিফিকেট দিবে? আর আপনিও সমস্যা নিয়ে তার কাছে যাবেন ? অথবা আপনি নিজে বাংলা পড়ে নিজের চিকিৎসা ও আইনি বিষয় সমাধান করেন? সেক্ষেত্রে তো ঠিকি বলবেন যে এগুলু আমার কাজ না। এ প্রশ্নের যে জবাব যারা মাজহাব মানবেনা বলে তাদের ও একি জবাব।
তাছাড়া আমরা সকলের জন্য সমহারে মাজাহাব মানা ওয়াজিব এ কথা ও তো বলিনা । বরং আমরা বলি মাজহাবের রয়েছে বিভিন্ন স্তর । আশা করি উত্তর পেয়েছেন। এ মাজহাব মানা মনগড়া কিছু নয় , বরং তা কোরআন –হাদিস, ইজমা দ্বারা প্রমাণিত । এবং যুক্তিও বলে মাজহাব মানা সঠিক হওয়া । আগামীতে উত্তর দিব,ইন্সাআল্লাহ।
প্রশ্ন ; আমাদের অনেক ভাই বলেন, মাযহাব মানার কোন দলীল নাই। বরং এটা ভিত্তিহীন, বানানো ,বিদাআত। আসলে কি তাই?
উত্তরঃ না ভাই, কথাটি সঠিক নয়। মাযহাব মানার অবশ্যই দলীল-প্রমান আছে। আমাদের কে প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে। তা হল, মাজহাব মানার অর্থ কি? এর একটা অর্থ হতে পারে কোরআন –সুন্নাহ বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কথা মানা । আরেকটা অর্থ হল, ধর্মীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিজ্ঞ বেক্তির ফায়সালা মেনে নেওয়া। যা তিনি কোরআন –সুন্নাহ কে সামনে রেখে প্রদান করেছেন। তার থেকে বর্ণিত প্রতিটি মাসয়ালায় তিনি কোরআন – হাদিসকে ই প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং এদের কথা মানার অর্থই হল , কোরআন হাদিস মানা । মূলত এদেরকে মানা উদ্দেশ্য নয়, এবং মানাও হয়না । বরং তাদের দেখান মূলনীতি অনুযায়ী কোরআন- সুন্নার উপর আমল করা ই উদ্দেশ্য , এবং তাই করা হয়। এমন নয় যে, তারা একেকটা নতুন ইসলাম দাড় করিয়েছেন।আর আমরা এ ইসলাম গুলুর অনুসরন করছি। সারকথা, দ্বীন মানার জন্য তাদের মাতামত গুলুকে সহায়ক হিসেবে নেয়া হয় মাত্র।
এখন আসুন, দলীল চতুষ্টয় দ্বারা আমরা মাজহাব মানা প্রমান করি।
কুরআনের আলোকে মাযহাব
কুরআনের মোট ৩ টি আয়াত এ বিষয়ে প্রমান হিসেবে তুলে ধরছি ।
১ ম আয়াতسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون ا তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা কর । সুরা, আল আম্বিয়াঃ৭,ও সুরা আন নাহালঃ৪৩,
টীকাঃ এ আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে যুক্ত । কিন্তু কুরআনের একটি মূলনীতি হল, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা এতে সীমাবদ্ধ থাকেনা।বরং শব্দের ব্যাপক অর্থ ব্যাবহার হবে।
বিশ্লেষণঃ দেখুন, আয়াতটির হুকুম রহিত হয়নি।
আয়াতে বলা হচ্ছে,অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। এখন আমরা যদি বলি , না তাদের অনুসরণ কারা যাবেনা । তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা হবেনা।
আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নাম ই হল , তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লামা খতীবে বাগদাদি (রাহ)বলেন, করান-সুন্নার যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম, তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের তাকলিদ করা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ।সুত্রঃ আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ৩০৬।
আল্লামা ফাখরুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন, উপরুল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে অনেকে ই মুজতাহিদ ইমামগনের তাকলিদ বৈধ ও অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন।
সুত্রঃতাফসিরে কাবির১৯/১৯,রুহুল মায়ানি-১৪/১৪৮, মাঝহারি- ৫-৩৪২, লুবাব-১২/৬১, কুরতুবি ১০/৭২

২য় আয়াতঃ اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولي الامر منكم হে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা “ উলিল আমর” তাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯
বিশ্লেষণঃ দেখুন , আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।আসুন, দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসির গণ কি বলেন। তাফসির গ্রন্থাবলিতে উলিল আমরের ২ টি তাফসীর পাওয়া যায়। ১মঃ কুরআন- সুন্নার ইলমের অধিকারী ফাকিহ ও মুজতাহিদগণ। ২য়ঃ মুসলিম শাসক বর্গ । ১ম তাফসীর টি অধিক গ্রহণযোগ্য । কেননা , এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন।
ইমাম রাযি (রাহ) প্রথম তাফসীরের সমর্থনে সারগর্ভ যুক্তি প্রমান অবতারনা করে বলেছেন, বস্তুত আয়াতে উলিল আমর ও উলামা শব্দ দুটি সমার্থক।
ইমাম আবু বাকার (রাহ) বলেন , এখানে মূলত কোন বিরোধ নেই। মূলত উলিল আমর শব্দ টি ব্যপক। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে ১ম তাফসীর গৃহীত হবে। আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে ২য় তাফসীর গ্রহন হবে। আয়াতের অর্থ হবে, তোমরা রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শাসকবর্গের কথা আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে আলিমগণের ইতায়াত কর । সুত্রঃ আহকামুল কুরআন-২/২৫৬,তাফসিরে কাবির-৩/ ৩৩৪ ।
মোট কথাঃ আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ ও রাসুলের ইতায়াত যেমন ফরয তেমনি কুরআন ও সুন্নার ব্যাখ্যা দাতা হিসেবে আলিম ও মুঝতাহিদ্গনের ইতায়াত ও ফরয।
আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যেখানে বলা হয়েছে মতবিরোধ পূর্ণ ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরার জন্য । এ ব্যাপারে আমরা বলবো, মূলত এ দ্বিতীয়াংশের মাধ্যমে ফকিহ ও মুজতাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সাধারন মানুষের জন্য নয়। যা আহলে হাদিস ইমাম জনাব নবাব সিদ্দিক হাসান খান তার লিখিত কিতাব “ফাতহুল বায়ান “ নামক গ্রন্থে স্বীকার করেছেন, তার ভাষায়ঃوالظاهرأنّه خطاب مستقلّ مستأنف موجّه للمجتهدين স্পষ্টতই এখানে মুজতাহিদ গণকে সতন্ত্রভাবে সম্ভোধন করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করলাম। আশা করি আমার লা মাজহাবী ভাইগণ একটু হলেও চিন্তা করবেন।
তৃতীয় আয়াত: والتّبع سبيل من أناب اليّ যে আমার অভিমুখী হয়েছে , তুমি তার পথ অনুসরণ কর। সুরা আল লোকমানঃ ১৫
এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সা”দ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল , ধর্মানুরাগী মুসলমান । আল্লামা জামাখসারি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর। সুত্রঃ আল কাসসাফ-৩/৪৭৯।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সরল পথে পরিচালিত কর ।অর্থাৎ তাদের পথে যাদের কে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
সাহাবা যুগে তাকলিদ
প্রশ্নঃ আমাদের অনেক ভাই বলেন, সাহাবা যুগে তাকলিদ ছিলনা। তাই আমরা ও কারো তাকলিদ করবোনা/মাজহাব মানবনা। এটা কি ঠিক ?
উত্তরঃ না ভাই, এটা মোটেও ঠিক নয়। দেখুন , আমি আবারও একটা বিষয় পরিষ্কার করছি। মাজহাব মানা/ তাকলিদ করার মানে কিন্তু এই নয় যে কোন ইমাম মনগড়া কথা বলে যাবেন , আর আমরা তা মেনে নেব। বরং তাকলিদ/ মাজহাব মানার অর্থ হল, একজন ধর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরান-সুন্নার আলোকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিবেন , আর যারা এ বিষয়ে জানেনা বা জানার সুযোগ নেই তারা তার কথা মতে আমল করবে। এ পদ্ধতি সবসময় ছিল। বরং রাসুলের যুগেও সাধারণ সাহাবায়ে কেরাম , যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন তারা আলেম সাহাবাদের কাছ থেকে জেনে আমল করতেন। আমাদের যে ভাইগণ মাজহাব না মেনে সরাসরি কোরআন হাদিসের উপর আমল করবেন বলেন, তারাও কিন্তু প্রতিটি কাজ কোরআন হাদিস খুলে তারপর করেননা । বরং তার নিকট গ্রহন যোগ্য শাইখ/ ইমামের কথা মানেন এবং তার রেফারেন্স দেন। যেমন , শাইখ মতিউর সাহেব, গালিব, জাকির নায়েক, বিন বাজ , আল বানি, ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা হানাফি মাজহাব মানার অর্থ হল, ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ) কোরআন সুন্নার আলোকে যে সমাধান দিয়েছেন তা মানি। অর্থাৎ তার রেখে যাওয়া উসুল অনুযায়ী কোরআন হাদিস বুঝার চেষ্টা করি। এটা অবৈধ কিছু নয়। কেননা হাদিস যাচাই বাছাই করার বর্তমান নিয়ম কিন্তু রাসুলের যুগে ছিলনা । পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে। আমরা কিন্তু সেগুলু ঠিকই মানছি । তাহলে উসুলে ফিকহ মানতে সমস্যা কি? এখন আসা যাক মূল আলোচনায় ।
সাহাবা যুগে তাকলিদ
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, মাজহাব/ তাকলিদ করার অর্থ হল ধর্মীয় অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকের কথা মানা। এ অর্থে সাহাবা যুগেও এর প্রচলন ছিল। কিন্তু যেহেতু আমাদের ৪ ইমামের আগমন সাহাবা যুগের পর তাই সাহাবারা আমাদের ইমাম দের অনুসরণ করেছেন কিনা ? এমন প্রশ্ন হাস্যকর । হ্যাঁ , প্রশ্ন হতে পারে এর প্রচলন তাদের যুগে ছিল কিনা? এর উত্তরে আমরা বলব , জি ভাই ছিল । যেমনঃ ১ম প্রমানঃ হযরত আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ বর্ণনা করেন, মুআজ ইবনে জাবাল গভর্নর হিসেবে ইয়ামেনে আগমন করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি, জনৈক ব্যক্তি ১ কন্যা ও ১ বোন রেখে মারা গেছে। এখন তাদের মাঝে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি কি হবে? তদুত্তরে তিনি প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক বলে সমাধান দেন। বুখারি শরিফ – ৮/৩৫১, হাঃ ৬৭৩৪
পর্যালোচনাঃ ক* মুয়াজ( রা ) একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মাত্র। ইয়ামান বাসী তার অনুসরণ করা ওয়াজিব ছিল। অন্যথায় তাকে প্রেরণ অনর্থক ও অহেতুক গণ্য হবে। যা নবীর (সা:) শানের খেলাফ।
খ, মুয়াজের ইয়ামেন গমন রাসুলের যুগেই ছিল। এর মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ রাসুলের যুগেই শুরু হল। কেননা , রাসুলের জীবিত থাকাকালীন যাবতীয় বিষয়ে মুয়াজের অভিমত দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
গ, প্রশ্ন ও উত্তর কোথাও দলিল উত্থাপন করা হয়নি। বরং তার প্রতি সুধারনার ভিত্তিতে তার কথা মানতে বাধ্য ছিলেন। এটাই তাকলিদে সাখছি।
২য় প্রমানঃ জনৈকা সাহাবী রাসুল (সা) এর কাছে আরয করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ!আমার স্বামী জিহাদে গেছেন।তিনি থাকাবস্তায় আমি তার নামায ও অন্যান্য আমল অনুসরণ করতাম। তার আসা পর্যন্ত আমাকে এমন আমল বলে দেন, যা তার সমপর্যায়ে হবে।সুত্রঃ মুসনাদে আহমাদঃ৩/৪৩৯, তাবরানি ২০/১৯৬,হাঃ৪৪১, মুস্তাদরাকে হাকিম২/৭৩ হাঃ ২৩৯৭।
পর্যালোচনাঃ দেখুন, হাদিসে মহিলা নামায সহ যাবতীয় আমলে তার স্বামী তথা ১ ব্যক্তির অনুসরণ করার কথা বলছেন, অথচ রাসুল কিছুই বললেন না । এতে তাকলিদ জায়েজ হওয়ার ইংগিত পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রমানঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাঃ এর ব্যপারে বলেন,আমি তোমাদের জন্য তাই পছন্দ করি ইবনে মাসুদ যা পছন্দ করে।সুত্রঃ মুসতাদরাক – ৩/৩১৯ হাঃ৫৩৯৪ । ইমাম জাহাবি ও হাকিম হাদিস টি কে সহিহ বলেছেন।
দেখুন, হাদিসে ইবনে মাসুদের পছন্দই রাসুলের পছন্দ বলে মত ব্যক্ত করা প্রমান বহন করে তার কথা অনুযায়ী অন্যরা আমল করলেও তা রাসুলের নিকট গৃহীত হবে। এর মাধ্যমে ও তাকলিদে শাখসি প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাবের মাসআলা – মাসাইল ইবনে মাসুদের বর্ণনা ও আমলের ভিত্তিতে ই হয়েছে।
৪র্থ প্রমানঃ মদিনাবাসীর তাকলিদ।
একদল মদিনাবাসি হযরত ইবনে আব্বাস কে মাসআলা জিজ্ঞেস করল যে, ফরয তাওয়াপের পর বিদায়ী তাওয়াপের আগে যদি কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে কি করবে? উত্তরে তিনি বললেন, বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কা শরীফ ত্যাগ করতে পারবে । মদিনাবাসি যাইদ বিন সাবিতের অনুসরণ করতেন। তাই তার বলল, আমরা যাইদ কে উপেক্ষা করে আপনার কথা মানতে পারিনা। যেহেতু আপনার ফাতওয়া যাইদের বিপরীত । সুত্রঃ বুখারি-২/৫৪১ ( ১৭৫৮-১৭৫৯)দেখুন, এখানে মদিনা বাসী যাইদ(রাঃ) এর অনুসরণ করতেন যা তাকলিদে শাখসি ছিল। তাই তারা ইবনে আব্বাসের কথা সরাসরি না মেনে বলল ,আমরা আগে যাইদ কে জিজ্ঞাসা করি, তারপর। অথচ এ মাসআলায় ইবনে আব্বাস সঠিক ছিলেন। পরে ইবনে আব্বাস তাদেরকে বুঝিয়ে বললেন, তাহলে তোমরা মদিনায় গিয়ে উম্মে সুলাইম কে জিজ্ঞাসা করে নিবে।সুত্রঃ আবু দাউদ-তায়ালাসি প্রঃ২২৯ পরবর্তীতে তারা তাই করল। যাইদ বিন সাবিত ও বিষয়টি তাহকিক করে ইবনে আব্বাসের কথা মেনে নেন। দেখুন, কি অপূর্ব অনুসরণ। সাধারনরা এমনিতেই মেনে নিল । আর যিনি বিজ্ঞ , তিনি তাহকিক করার পর মেনে নিলেন। সুতরাং সাহাবারা কারো অনুসরণ করেননি এমনটা বলা ঠিক হবেনা।
আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন। আমীন।আমীন।আমীন