সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বশান্তি ও মানবতার মুক্তিদূত মহানবী (সা.), তাঁর পরিবার ও তাঁর প্রচারিত শান্তির ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার ও বিদ্বেষপ্রসূত চলচ্চিত্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি মুসলিম বিশ্বে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইহুদি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক স্যাম বাসিল এ ফিল্ম তৈরি করেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আমেরিকায় বসবাসরত ১০০ ইহুদি ব্যবসায়ীর অর্থানুকূল্যে ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করেন ইনোসেন্স অব মুসলিম নামে রহস্যপূর্ণ এ চলচ্চিত্র। পশ্চিমাদের ন্যক্কারজনক এই আচরণের বিরুদ্ধে কেবল মুসলিমরাই নন, বিবেকবান প্রতিটি মানুষই সোচ্চার ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। ইন্টারনেট ব্লগগুলোয় দেখা যায়, অনেক নাস্তিকও এ কাজের নিন্দা জানিয়েছেন।
যে মানুষটি শুধু তাঁর সমকালীন মিত্র ও সঙ্গীদের প্রিয়তম ব্যক্তি ছিলেন না, ছিলেন আদর্শিকভাবে তাঁর ঘোর শত্রুদের চোখেও শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য। সমসাময়িক অনুচরবৃন্দ থেকে নিয়ে মহাপ্রলয়ের দিন পর্যন্ত যে মানুষটি সব বিবেকবান অবলোকনকারীর দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভালোবাসার পাত্র। যাকে ‘সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’ অভিধায় ভূষিত করেছেন খোদ নিখিল সৃষ্টির নিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। যে মানুষটির জীবনেতিহাস ও মানবজাতির প্রতি তাঁর অপরিসীম অবদানের আলেখ্য পড়ে ভক্তি গদগদ হয়ে ওঠেন আধুনিক বিশ্বের নিরপেক্ষ অসংখ্য মনীষী, সেই মানুষকে নিয়ে যখন ব্যঙ্গ কার্টুন আঁকা হয়, সিনেমা বানিয়ে তাঁর চরিত্রে যাচ্ছেতাই কালিমা লেপন করা হয়, তখন শুধু বিশ্বের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ পাঠকারীদের অন্তরই নয়, বিবেকবান প্রতিটি মানুষের হৃদয়ই কেঁদে ওঠে। সেই অন্তরের রক্তক্ষরণ আর চোখের জলেই এখন জ্বলছে ক্ষোভের আগুন।
পশ্চিমাদের বিবেক-বিবেচনা দেখে তখনই দুঃখটা জাগে, যখন দেখি তারা চিন্তা-বাকস্বাধীনতার স্লোগান দিতে দিতেই আইন করে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে। যখন তারা কেবল নিজেদের ভোগ-বিলাসের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে রাজনীতির বলী বানায় অসংখ্য নিরীহ বনি আদমকে। অপরদিকে, কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় আঘাত করে যে কুলাঙ্গার সিনেমা বানায় তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয়। তথাকথিত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে আর কত অন্যায়কে জায়েয করা হবে?
ব্রিটিশ রাজপুত্র ইউলিয়াম তার স্ত্রী কেটকে নিয়ে ফ্রান্সের সাগরপারে বিনোদন করেছেন। সেখানে তোলা তাদের কিছু নগ্ন ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করায় তিনি ও ব্রিটিশরা বেজায় চটেছেন পত্রিকার ওপর। এটাকে তিনি ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে অপমান জ্ঞানে মামলা করেছেন। (আদালত তার পক্ষে রায়ও দিয়েছে।) অথচ একই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে ত্যাগী মানুষ, মানুষের মুক্তি ও শান্তির চিন্তায় জীবনপাতকারী রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদাহানি করে আমেরিকায় সিনেমা বানানো হলো। তথাপি এ ব্যাপারে পশ্চিমা নেতারা পরিষ্কার নিন্দাসূচক কিছু বলছেন না। মুসলিম ঔরসে জন্ম নেয়া ইহুদি-বান্ধব বারাক ওবামাও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, সিনেমা নির্মাণের ক্ষোভ প্রশমিত না হতেই আবার ফ্রান্সের এক সাপ্তাহিকে রাসুলকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন ছাপা হয়েছে! পশ্চিমাদের তথাকথিত নীতিকথা আর আদর্শের পুরোটাই যে ভেক আর ভণ্ডামি তা আরও প্রমাণ হলো।
যে ধর্মের নাম থেকে নিয়ে কর্ম ও চিন্তার প্রতিটি পর্যায়ে লক্ষণীয় ‘শান্তি’শব্দের সক্রিয় উপস্থিতি, যে ধর্ম শুধু তার অনুসারীদেরই নয়, বিধর্মীদেরও দেয় নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ও মর্যাদা, সে ধর্মকে জোর করে উগ্র বানানোর উন্মাদ প্রচেষ্টা বড়ই হাস্যকর। বলতে দ্বিধা নেই, আজ বিশ্ব সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে যে মৌলিক চেতনাগুলোর ওপর, তার অধিকাংশের চারা রোপন করেছে এই ইসলাম। এত অত্যাচার, অপপ্রচারেও যে ধর্মের অনুসারীদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না, বিশ্বের সব মতবাদ আর ইজমের কাছে হতাশ হয়ে যে ধর্মের শান্তির শীতল ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন পাশ্চাত্যের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ও সভ্য মানুষগুলো, সে ইসলামের ওপর কেন এত রাগ আর এত বদনাম গাওয়া তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আল্লাহর ওহি প্রাপ্তির মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বমানবতাকে মানুষের দাসত্ব থেকে একমাত্র শরীকবিহীন আল্লাহর ইবাদতের পথ দেখিয়েছেন। এর ফলে আল্লাহ বৈ সব কিছুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। তিনি বিশ্বমানবতাকে সব কল্পকথা ও কুসংস্কার এবং সব রকমের মিথ্যা ও প্রতারণার সামনে শির না নোয়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন। অক্ষম প্রতিমা ও অলীক প্রভুদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করেছেন। মুক্ত করেছেন অসুস্থ চিন্তাধারা থেকে। বিশ্ব মানবতার চেতনায় ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার চারা রোপণ করেছেন। তাঁর প্রতি অবতীর্ণ গ্রন্থ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’। জীবদ্দশায় তিনি নিজেও দ্ব্যর্থহীনভাবে মুসলমানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসকারী অমুসলিমদের সব অধিকার নিশ্চিত করেছেন। ধর্ম-বর্ণ-বংশ নির্বিশেষে বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যে বরং এমন উপাদানেরও অভাব নেই, যা পক্ষী ও প্রাণীকুলের প্রতি মায়া-মমতা ও কোমলতা দেখাতেও গুরুত্ব দেয়। নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এদের অকারণে কষ্ট প্রদান কিংবা এদের প্রতি বিরূপ আচরণকে।
তিনি তাঁর অগ্রবর্তী সব নবীর প্রতি ম্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল চিত্র উপস্থাপন করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন নবী ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা (ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নবী) প্রমুখ। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। প্রস্থানের তিন মাস আগে বিদায় হজে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি মানুষের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানে আঘাত হানাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি মানুষের সহজাত প্রকৃতি-বান্ধব এক দীন নিয়ে আবির্ভূত হন, যা আত্মিক খোরাক ও দৈহিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখে। পার্থিব কাজ ও আখিরাতের আমলের মধ্যে ভারসাম্য বিধান করে। মানুষের সহজাত বাসনা করে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত। অপরাপর জাতিগুলোর সভ্যতার মতো একে ধ্বংস বা অবদমিত করে না।
মানবতার কল্যাণে মহানবী (সা.) আন্তঃসম্প্রদায় ভ্রাতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ নমুনা পেশ করেছেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কোনো মানব সম্প্রদায়ের ওপর অন্য কোনো মানব সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মূল সৃষ্টি, অধিকার ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান। শ্রেষ্ঠত্ব বিবেচিত হবে কেবল ঈমান ও তাকওয়া তথা বিশ্বাস ও আল্লাহভীতির নিরিখে। তিনি তাঁর সব সঙ্গী-সাহাবিকে ধর্মসেবা এবং তাতে সম্পৃক্ত হওয়ার সমান সুযোগ দিয়েছেন। তাই তো তাঁদের মধ্যে আরবদের পাশাপাশি ছিলেন (রোম দেশের) সুহাইব রুমী, (হাবশার) বিলাল হাবশী এবং (পারস্যের) সালমান ফারসি রাদিআল্লাহু আনহুম প্রমুখ।
নৈতিক অধঃপাতে নিপতিত মানবজাতি যখন মহানবীর কালজয়ী আদর্শকে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ভাবছে, তেমনই মুহূর্তে তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র কিংবা অবমাননাকর সিনেমা নির্মাণ কেবল পাশ্চাত্যের দেউলিয়াপনাকেই নয়; তাদের কূটমানসিকতা ও ইসলাম বিদ্বেষকেও সপ্রমাণ করছে। আল্লাহর কাছে আমরা তাদের সুমতি কিংবা চূড়ান্ত পতন কামনা করছি।
লেখক : তরুণ আলেম, প্রাবন্ধিক

নেয়া হয়েছে এখান থেকে।

                                                                                                                                                                   

আদালতের প্রতি অভিনেত্রী সিনডি গার্সিয়া : অবমাননাকর চলচ্চিত্রটি তুলে নেয়া হোক ইউটিউব থেকে

মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করে নির্মিত কুখ্যাত চলচ্চিত্রটি গুগলের ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব থেকে বাদ দেয়ার জন্য আদালতের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন খোদ ছবির অভিনেত্রী সিনডি লি গার্সিয়া। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি আদালতে তিনি এ বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন।
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা নিকোলা বাসেলি তাকে প্রতারণা করে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামে এই ঘৃণ্য ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন সিনডি। এছাড়া তার এই ছবিতে অভিনয়ের ফলে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগায় তিনি সবার কাছে ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন।
চলচ্চিত্রটি নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘৃণ্য এই চলচ্চিত্রটি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর থেকেই এটি নির্মাণের পেছনে জড়িত ইসরাইলি বংশোদ্ভূত আমেরিকান পরিচালক নিকোলা বাসেলি নাকোলা আত্মগোপনে আছেন।
ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে সিনডি লি জানিয়েছেন, বাসেলি যখন তাকে এর পাণ্ডুলিপিটি দিয়েছিল তখন এর মধ্যে কোথাও মহানবীর নাম কিংবা কোনো ধর্ম সম্পর্কে উল্লেখ ছিল না। ছবিটির ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন।
মার্কিন অভিনেত্রী সিনডি লি গার্সিয়া এই চলচ্চিত্রটিতে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মেয়ে ফাতেমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এদিকে মহানবীকে বিদ্রূপ ও অপমান করে চলচ্চিত্র নির্মাণকারী আমেরিকান নাগরিক নিকোলা বাসেলির জন্য আমেরিকার আইনে কোনো শাস্তি নেই। তার কর্মকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত হলেও আমেরিকায় সপরিবারে নিরাপদেই আছেন তিনি। পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।
আমেরিকার এবিসি নিউজ ও ব্রিটেনের লন্ডন ফ্রি প্রেস তার স্বজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ করে। খবরে বলা হয়েছে, সোমবার ভোরে বাসেলির পরিবারের লোকজন গোপন স্থানে চলে গেছে। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফের দফতরের লোকজন।
সোমবার ভোর চারটার পরপরই বাসেলির পরিবারের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। লস অ্যাঞ্জেলেস শেরিফের কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের এস্কর্ট করে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যায়। পুলিশি পাহারায় তাদের গোপন স্থানে বাসেলির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় বাসেলির পরিবারের লোকজনের সবার মুখ ঢাকা ছিল। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত কিংবা বিশেষ ধর্মের অবমাননা অথবা বিশ্বব্যাপী সহিংসতা ছাড়ানোর অপরাধে কোনো অভিযোগের মুখোমুখি হননি গোঁড়া ইহুদিবাদী বাসেলি। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও আটক রাখার মতো কোনো অপরাধ খুঁজে পায়নি। যদিও বাসেলি নিজেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে ওই চলচ্চিত্রে সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
গত সপ্তাহে আমেরিকান ফেডারেল প্রবেশন কর্মকর্তারা বাসেলিকে এ চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়ে তার ভূমিকা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাসেলি এর আগে ব্যাংক জালিয়াতি ও ইন্টারনেটে অপরাধমূলক কাজ করার দায়ে পুলিশের সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল। বাসেলির পরিবারের লোকজনের পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে শেরিফের দফতরের মুখপাত্র স্টিভ হুইটমোর বলেন, তারা বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছে, তা তার জানা নেই। স্বজনদের নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে বাসেলির আর ফেরার সম্ভাবনা নেই বলেও উল্লেখ করেন হুইটমোর।

নাইকা ছিল ছবিটির

নেয়া হয়েছে এখান থেকে।

                                                                                                                                                       

সু চির কংগ্রেশনাল মেডেল গ্রহণ : নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল মেডেল গ্রহণ করেছেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে দীর্ঘ লড়াই চালানোর স্বীকৃতি হিসেবে বুধবার তাকে এই সম্মাননা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে ওবামার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন সু চি। ১৯৬২ সাল থেকে সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমার সম্প্রতি গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে। সম্মাননা গ্রহণ অনুষ্ঠানে শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি বলেন, ‘আজ আমার জীবনের ছবির মতো একটি দিন। একটি অবিভক্ত গৃহে (কংগ্রেস) এসে দাঁড়িয়েছি আমি। আর দূর থেকে আসা এক আগন্তুককে স্বাগত জানাতে সবাই একত্রিত হয়েছেন এখানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যে মুখগুলো আমি দেখছি, তাদের কাউকে কাউকে আমি গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় দেখেছিলাম এবং কাউকে কাউকে দেখেছি গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর।’ ১৭ বছর গৃহবন্দি থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা সু চির প্রতি যে দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে এসেছেন, সেজন্যও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য সু চির সাহস ও ব্যক্তিগত আত্মত্যাগের প্রতি প্রেসিডেন্ট শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি তার দেশের ওপর থেকে সব ধরনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এবং পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার শয়ে মানের মালিকানাধীন মার্কিন সম্পদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। পরে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সু চি বৈঠক করেন। এই বৈঠকেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’ পরিয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে গত মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গতকাল বুধবার) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের ওপর থেকে মার্কিন অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানান সু চি। মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে চাপের মুখে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের পক্ষে কথা বলে এসেছেন সু চি। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন রাজনৈতিক সংস্কার শুরু করায় গত জুলাইয়ে দেশটির ওপর থেকে মার্কিন বিনিয়োগে অবরোধ শিথিল করা হয়। হিলারির সঙ্গে বৈঠক শেষে সু চি ‘গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে মিয়ানমারকে সমর্থন অব্যাহত রাখায়’ যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তার দেশে চলমান সংস্কার এগিয়ে নিতে অবরোধ রাখার প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সাম্প্রতির অগ্রগতিতে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেসি পার্টি ও দেশটির প্রেসিডেন্ট থিয়েন সিয়েনের পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন ওবামা। সম্মাননা গ্রহণ অনুষ্ঠানে সু চি আরও বলেন, ‘আজ এটি সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্ট থিয়েন সিয়েনের সংস্কার পদক্ষেপের কারণে।’ অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে একজন মন্ত্রী ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত মিয়ানমারের নতুন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। সু চি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে আসছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিয়েন সিয়েন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এখান থেকে নেয়া হয়েছে।

                                                                                                                                                                

মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ অব্যাহত

মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ ও পরিচালকের বিচার দাবি করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) : মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও তা প্রদর্শনের প্রতিবাদে গত বুধবার বিকালে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সর্বদলীয়ভাবে বিক্ষোভ মিছিল করাসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কুশপুত্তলিকা দাহ ও মার্কিন পতাকা পোড়ানো হয়েছে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) ব্যঙ্গাত্মক করে ইসলাম বিরোধী মার্কিন চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’-এর নির্মাতাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সভায় বক্তব্য দেন জসিম উদ্দিন সরদার, আবদুল লতিফ মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, মাওলানা ফজলুল হক, লিটন আবদুল্লাহ প্রমুখ।
ঝালকাঠি : মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, সরদার মো. শাহ আলম প্রমুখ।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : মহানবী মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গ সিনেমা নির্মাণের প্রতিবাদে গত বুধবার চৌদ্দগ্রাম বাজারে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত। ভিপি জাহাঙ্গীর, মনিরুল ইসলাম, আবুল খায়ের, আহসান উল্যাহ, শামীম বক্তব্য রাখেন।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) : দামুড়হুদা মুসলিম সমাজের ব্যানারে গত বুধবার বাদ আছর দামুড়হুদা উপজেলা সদরের বিভিন্ন ইসলামী ও সমমনা দলের সমন্বয়ে বিশাল মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মাও. শফিকুল ইসলাম, প্রভাষক আবদুল আলীম, মাও. আব্দুস সাত্তার, মুফতি রুহুল আশীন, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
জামালপুর : যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম উম্মার প্রতি কটূক্তি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন মাওলানা আবুল কাশেম, মেরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, বাবুল প্রমুখ।
রাজনগর (মৌলভীবাজার) : বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজনগর উপজেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে এসে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

এখান থেকে নেয়া।

                                                                                                                                                               

মহানবীর (সা.) সম্মানহানি ও ইসলাম নির্মূলের চক্রান্তের প্রতিবাদে পল্টনে ১২ দলের মহাসমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার
শীর্ষ আলেমে দ্বীন এবং ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের আহ্বায়ক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেছেন, মহানবীর (সা.) সম্মান হেফাজত ও ইসলাম নির্মূলের চক্রান্তের প্রতিবাদে ২২ সেপ্টেম্বর পল্টনের মহাসমাবেশ। সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে মহাসমাবেশ সফল করা হবেই ইনশাআল্লাহ।
গতকাল দুপুরে ২২ সেপ্টেম্বর মহাসমাবেশ নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ১২ দলের শীর্ষ নেতাদের এক বিশেষ বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সমমনা ১২ দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ১২ দলের সদস্য সচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন প্রমুখ।
বৈঠকে শীর্ষ নেতারা বলেন, মহানবীর (সা.) সম্মান রক্ষা ও ইমান রক্ষার এ মহাসমাবেশের বিরুদ্ধে সরকার গভীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। পল্টন ময়দানের অনুমতি নিয়ে গড়িমসি ও লুকোচুরি খেলছে। ইমান হেফাজতের এ আন্দোলনে সারাদেশের ঈমানদাররা এরই মধ্যে একাকার হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। কোনো শক্তিই ইমানি এ আন্দোলন থেকে মুসলমানদের ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পল্টন মহাসমাবেশে বাধা এলে লাগাতার গণআন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
মতবিনিময় সভা : বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় হিসেবে গতকাল বিকাল ৪টায় পল্টনের বিএমএস পরিষদ মিলনায়তনে মাদরাসা প্রিন্সিপাল ও বিশিষ্ট আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানীসহ অন্য নেতারা। সভায় উলামায়ে কেরাম ও শিক্ষাবিদরা ইমান রক্ষার এ আন্দোলনে সার্বিক সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এছাড়া গতকাল দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা ও ইসলামিক টিভির সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ১২ দলের নেতারা।
এখান থেকে নেয়া।

মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চলচ্চিত্র : দেশজুড়ে প্রতিবাদ দায়ী ইহুদি নাগরিকের শাস্তি দাবি

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক ইহুদি কর্তৃক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংবলিত ব্যঙ্গাত্মক চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে বক্তারা ওই চলচ্চিত্র পরিচালকের শাস্তি দাবি করে আমেরিকান সরকারকে এ বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :
নির্মাতার শাস্তির দাবিতে সাভারে বিক্ষোভ : মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংবলিত ব্যঙ্গাত্মক চলচ্চিত্র নির্মাতার শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সাভারের ভাকুর্তার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। গতকাল ভাকুর্তার ফিরিঙ্গিকান্দা ও বাহেরচরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়। সাভার থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন মিন্টুর নেতৃত্বে মিছিলটি সাভার-কেরানিগঞ্জর সংযোগ সড়কের ইটাভাড়া সেতুতে অবস্থান নিয়ে সড়কে আধা-ঘণ্টা অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রভাষক সেলিম সরদার, প্রভাষক আসলাম তালুকদার, আওলাদ হোসেন মাস্টার, মাওলানা ইসমাইল হোসেন, ডা. মমতাজ উদ্দিন, আবদুল আজিজ, সেলিম রেজা, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন, জাকির হোসেন প্রমুখ।
বরিশাল শেবাচিমে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ : একই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ ও শেবামেক ছাত্র সংসদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমবেশ আনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বারাক ওবামার কুশপুত্তলিকায় আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১২টায় শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হারুন-অর রশিদের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। ভিপি আবু তালিব মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ মারুফের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন শেখ আবদুল বাকি, তরিকুল ইসলাম রিপন প্রমুখ। বক্তারা বারাক ওবামাকে মুসলিম জনতার কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ চলচ্চিত্র নির্মাতার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল : মহানবীকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গ করার প্রতিবাদে ফেনীতে তানজীমুল মাদারিসিল কাওমীয়্যাহর উদ্যোগে স্মরণকালের বৃহত্তর সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বাদ আসর শহরের মিজান ময়দানে মিছিল শেষে সমাবেশ হয়। সমাবেশে মুফতি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মুফতি ইউসুফ কাসেমী, মুফতি ইলিয়াছ, মুফতি আহসান উলল্গাহ, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
ভাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গতকাল মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সমাবেশে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসা ও অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেন। এ সময় বক্তারা ছবির পরিচালকের ফাঁসির দাবিসহ সব আমেরিকান পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। সংসদে তীব্র নিন্দা প্রস্তাবের জন্য বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা সবকারের কাছে আহ্বান জানান। প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম হয় বিক্ষোভ মিছিলে। পরে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
মাদারীপুরে ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাজকল্যাণ পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ : একই ঘটনার প্রতিবাদে মাদারীপুরে ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে বুধবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের পুরনো বড় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে বিক্ষোভ সমাবেশে মাদারীপুর জেলা ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ মাওলানা বোরহান উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দরগাহ শরীফের পীর আলহাজ মাওলানা শরীফ মুজিবুল হক, চণ্ডিবর্দী পীর মাওলানা আলী আহমদ চৌধুরী, মাওলানা জাহিদুল আলম, মুফতি জামাল উদ্দিন খান, মাদারীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ : মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে উলামা মাশায়েখ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা লক্ষ্মীপুর শহরে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। অপর দিকে সকালে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা মার্কিন পতাকায় আগুন দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মার্কিন পতাকায় অগ্নিসংযোগ : গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামেয়া ইউনুসিয়া মাদরাসার উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। দুপুরে জামিয়া ইউনুসিয়ার অধীনে ৮০টি মাদরাসার কমপক্ষে ১৫ হাজার ছাত্র শহরের লোকনাথ দীঘির ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের কাউতলী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কাউতলীর গোলচত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ভাদুঘর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মনিরুজ্জামান সিরাজ ও জামেয়া ইউনুসিয়ার মোহতামিম এবং এদারায়ে তালিমিয়ার প্রধান আশেকে এলাহীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মাওলানা রমহতুল্লাহ, মাওলানা সাজিদুর রহমান প্রমুখ।
ফুলগাজীতে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল : ফেনীর ফুলগাজীতে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে ফুলগাজী উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে একটি বিশাল মিছিল বের হয়ে ফুলগাজী বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, মুন্সীরহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা ও মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মিছিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন।
সাঁথিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা : গতকাল পাবনার সাঁথিয়ায় মার্কিন চলচ্চিত্রে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং ইসলামকে অবমাননা এবং ফ্রান্সে কার্টুনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সাঁথিয়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শাখার সভাপতি ও বোয়াইলমারী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বোয়াইলমারী মাদরাসা থেকে মিছিলটি উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
পাথরঘাটায় মানববন্ধন ও মার্কিন পতাকায় অগ্নিসংযোগ : আমেরিকায় ইহুদি নির্মাতা কর্তৃক মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে গতকাল পাথরঘাটায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মানববন্ধন পালিত হয়েছে। এ সময় ক্ষুব্ধ তরুণরা মার্কিন পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে। এক ঘণ্টা দীর্ঘ মানববন্ধনে পাথরঘাটার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাসহ সর্বস্তরের জনতা অংশগ্রহণ করেন।
মার্কিন ব্যঙ্গ চলচ্চিত্রের প্রতিবাদে চুনারুঘাটে বিক্ষোভ মিছিল : মার্কিন চলচ্চিত্রে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গ চলচ্চিত্র করার প্রতিবাদে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার যৌথ উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় চুনারুঘাট সদর গাউসুল আজম জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় মধ্যবাজারে সমাবেশে মিলিত হয়।
মতলবে বিক্ষোভ সমাবেশ : গতকাল চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচরে ছেংগারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে মহানবকে (সা.) অবমাননা করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছেংগারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে প্রধান মৌলভী মাওলানা কবির আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এসএমসির সদস্য আবু জাফর সরকার ডালিম, মো. মানিক, সহকারী প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ প্রমুখ।
ফটিকছড়িতে স্মরণকালের বৃহত্তম মিছিল : রাসুল (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর ও মানহানিকর ব্যঙ্গাত্মক সিনেমা নির্মাণ-প্রচারের প্রতিবাদে ফটিকছড়িতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও শহীদ ইকবাল বিন ইয়াকুব স্মৃতি সংসদ স্মরণকালের বৃহত্তম মিছিল-সমাবেশ করেছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তারা মার্কিন চলচ্চিত্রকারের শাস্তি দাবি করেন।
আল্লামা মুফতি শাহ্ আহ্্মদ শফীর প্রতিবাদ : মহানবী (সা.)-কে বিদ্রূপ ও অবমাননা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের শীর্ষ আলেম দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা মহাপরিচালক পীর আলল্গামা শাহ্্ আহ্্মদ শফী এক বিবৃতিতে বলেছেন, পশ্চিমা ইহুদি ও খ্রিস্টান বিশ্বে এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে মুসলমানদের বুকে ছুরিকাঘাত করেছে। তিনি অবিলম্বে চলচ্চিত্র নির্মাতাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে মুসলিম জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। গতকাল দেয়া ওই বিবৃতিতে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অন্যথায় সমগ্র বিশ্বে পশ্চিমাদের স্বার্থহানিসহ উদ্ভূত পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে।