বর্তমান সময়ের গৃহিনীরা একটি ফ্রীজ ছাড়া ঘরের আসবাপ পত্র পরিপূর্ন মনে করেন না ।একটি ফ্রিজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ন উপাদানে পরিনত হয়েছে।যদি হঠাৎ আমাদের এই প্রয়োজনীয় ফ্রীজটি নষ্ট হয় তাহলে পরিবারের সবার দুশ্চিন্তার অন্ত থাকেনা । যেহেতু এটি একটি ভারী বস্তু ও পরবিহনে সমস্যা এবং বেশ খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার।তাই আগে থেকেই আপনার এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিষটির ব্যাপারে যথাযত ভাবে যত্নবান ও রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়েজনীয় তথ্য জেনে রাখা দরকার ।আজকে আমি জানাবো কিভাবে আপনার ফ্রীজের বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান যে ভাবে করবেন – তা নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
আপনার ফ্রীজের বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান যে ভাবে করবেন নিজে নিজেই।
ঘরের ফ্রিজটি কি ঠিকমতো ঠান্ডা হয় না?আপনার ফ্রিজের দরজা ভালো ভাবে বন্ধ হচ্ছে না ?ফ্রিজটি কি সারাক্ষণ জোরে জোরে শব্দ করে? আপনার ঘরের অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রটি নষ্ট হলে কিন্তু মহাবিপদ, তাই না? চিন্তা নেই, আছে অনেক সমাধান।যা আপনি একটু চেষ্টা করলে নিজেই ঠিক করতে পারবেন আপনার নিজের ফ্রিজ নিজেই ।
ফ্রিজ যথেষ্ট ঠান্ডা হয় না?
দেখুন প্লাগ ঠিকঠাকমতো লাগানো আছে তো? তাহলে ফ্রিজের পেছনে ক্যাপাসিটরে দেখুন তো ধুলো বা বেশি ময়লা জমে আছে কিনা? তবে খুব সাবধানে পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া ফ্রিজের দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় কিনা হালকাভাবে চাপ দিয়ে দেখুন। যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে এয়ারটাইট নয়।
সারাক্ষণ জোরে জোরে শব্দ করে ?
দেখুনতো আপনার ফ্রিজটি কি দেয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে? তাহলে দেয়াল থেকে কমপক্ষে ১০ সেন্টিমিটার দূরে রাখুন। চেক করে নিন ডিপফ্রিজে বরফ জমে আছে কিনা। ফ্রিজের ক্যাপাসিটরের বেশি কাজ করা বা শক্তি খরচ করা থেকেও কিন্তু এই শব্দ হতে পারে।
ফ্রিজে পানি জমে থাকে?
চিকন ব্রাশ :- ফ্রিজে পানি জমে থাকে? ফ্রিজের ভেতরে পানি যাতায়াতের জন্য নলের ভেতরে একটি ছিদ্রের মতো ব্যবস্থা থাকে৷ আর সেটা দিয়ে পানি যাতায়াত না করতে পারলেই ভেতরে পানি জমে থাকে৷ এমনটা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরে নেওয়া হয় যে, কোনো কারণে চিকন নলের ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে বা আটকে গেছে৷ তাই পরিষ্কার করে নিন৷ প্রয়োজনে একটি চিকন ব্রাশ বা দাঁত ব্রাশও ব্যবহার করতে পারেন৷
দরজা বন্ধ হয় না?
আমরা জানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সীল ডিফেক্ট হলে দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না। অনেক সময় ফ্রিজ খুব ভালো করে পরিষ্কার করার পর আবার ঠিকমতো দরজা লাগানো যায়।যদি সহজে না লাগতে চায় তাহলে হালকা একটু চাপ দিয়ে বেধে রাখুন ঘন্টাখানেক পরে দেখবেন ফোলা কমে দরজা ঠিকমতো বসে গেছে। তারপরও যদি না হয়, তাহলে দারজার গ্যাসকেট বদল করা দরকার। তবে আপনার ফ্রিজটি বেশি পুরনো হলে নতুন ফ্রিজ কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ডিপফ্রিজে বরফের স্তূপ পরিষ্কার:
সাধারণত সীল ডিফেক্ট হলে দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না। অনেক সময় ফ্রিজ খুব ভালো করে পরিষ্কার করার পর আবার ঠিকমতো দরজা লাগানো যায়৷ তারপরও যদি না হয়, তাহলে দারজা বদল করা দরকার৷ তবে আপনার ফ্রিজটি বেশি পুরনো হলে নতুন ফ্রিজ কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে৷
তাছাড়াও
অতিরিক্ত খাবার, বিশেষ করে রান্না করা খাবার ফ্রিজে না রাখাই ভালো৷ এতে ফ্রিজের ভেতরে কেমন যেন গন্ধ হয়ে যায়৷ তাই নিয়মিত পরিষ্কার করুন৷ মাঝে মাঝে লেবুর পানি দিয়ে মুছেও নিতে পারেন, কিংবা একটি লেবুকে দুইভাগ করে কেটে ফ্রিজে দুইদিন রেখে দিতে পারেন৷ এতে দূর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে ফ্রিজে লেবুর তাজা সুবাস ছড়াবে৷
ফ্রিজ দীর্ঘদিন ভালো রাখার ৭টি সহজ উপায়:
- অকারণে দরজা খোলা থেকে বিরত থাকুন:ফ্রিজের দরজা যত কম খুলবেন, ততই ফ্রিজের ভেতরকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো থাকবে। কিছু রাখার জন্য বার বার ফ্রিজ না খুলে একসাথে গুছিয়ে সব একসাথে রাখুন বা বের করুন।
- দেয়াল থেকে দূরে রেফ্রিজেরেটর রাখুন :দেয়ালের সাথে ফ্রিজকে ঠেসে না রেখে দেয়াল থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করুন। অন্তত কিছুটা দূরে। এতে ফ্রিজ কম শক্তিতে বেশি ঠান্ডা করতে পারে।
- চুলা বা ওয়াটার হিটার থেকে ফ্রিজ দূরে রাখুন :ফ্রিজকে অবশ্যই এমন কিছু থেকে দূরে রাখুন যা তাপ উৎপন্ন করে। বিশেষ করে চুলা, স্টোভ, ওয়াটার হিটার এসব থেকে দূরে রাখুন।
- ফ্রিজকে বাতাসের সংস্পর্শে রাখুন:বন্ধ ঘরে ফ্রিজ না রেখে যেখানে বাতাসের ঠিকমত প্রবাহ হয় তেমন জায়গায় ফ্রিজ রাখুন। ফ্রিজের পেছন দিক দিয়ে যে গরম বাতাস বের হয় তা সাধারণ বাতাসের সাথে মিশে বাতাস অদল বদল করে। আপনি যদি, এমন জায়গায় ফ্রিজ রাখেন যেখানে ফ্রিজের আশেপাশে ঠিকমত বাতাস পৌঁছোও না, তবে ফ্রিজকে খুব বেশি শক্তি অপচয় করতে হবে আর খুব দ্রæতই আপনার রেফ্রিজেরেটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- সরাসরি গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না :সরাসরি গরম খাবার ফ্রিজে রাখা মোটেও উচিত নয়। কারণ, সে খাবার ঠান্ডা করতে ফ্রিজকে খুব বেশি শক্তি অপচয় হয়। এছাড়াও সরাসরি গরম খাবার থেকে আপনার ফ্রিজে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে।
- পিছনের দেওয়ালে জিনিসপত্র ঠেসে দিবেন না :রেফ্রিজেরেটরের পেছনের দেয়ালে কোন কিছু ঠেসে রাখা থেকে বিরত থাকুন। এটি ফ্রিজের শীতল চক্রের ক্ষতি করে ফলে ফ্রিজকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। তাছাড়া আপনার রাখা সবজি বা মাছ মাংসের জন্যই এটি ভালো নয়।
- খাবার ঠান্ডা হতে পরিমিত সময় দিন:খুব তাড়াতাড়ি খাবার বা মাছ, মাংস ঠান্ডা করার জন্য যদি আপনি ফ্রিজের ঠান্ডা হবার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন । তবে বোকামি করবেন। এতে ফ্রিজের খুব বেশি শক্তি খরচ করতে হয় যা থেকে আপনার ফ্রিজ নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এর চেয়ে বরং জিনিস ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজকে পরিমিত সময় দিন।
- কুলিং কয়েল পরিষ্কার রাখুন :ফ্রিজের পেছন দিকে যে কুলিং কয়েল থাকে সেখান থেকেই ফ্রিজে শক্তি পৌঁছায়। সেই কুলিং কয়েলে প্রচুর ধুলো জমলে শক্তির প্রবাহ কমে যায় আর তখন ফ্রিজের শক্তি বেশি ব্যয় হয়। তাই এই কুলিং কয়েল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। তবে একটু সাবধানে করবেন যেন কুলিং কয়েলের বক্ররেখাগুলোর কোন ক্ষতি না হয়। তাহলে সেগুলো কর্মদক্ষতা কমে যাবে।
- জমে থাকা অতিরিক্ত বরফ অপসারণ করুন :অনেকে ভাবেন, ফ্রিজে যত বরফ থাকবে ততই ভালো। এই ধারণা কিন্তু একদম ভুল। অতিরিক্ত বরফ জমা হলে রেফ্রিজেরেটরের ঠান্ডা করার কর্মদক্ষতা কমে যায়। তাই ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমা হলে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো অপসারণ করুন।
- এনার্জি বাল্ব সংযুক্ত করুন:ফ্রিজে একটি এনার্জি বাল্ব সংযুক্ত করুন। এটি ফ্রিজে থাকা বাল্ব থেকে বেশি তাপ উৎপন্ন করবে যার ফলে আপনার রেফ্রিজেরেটরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে লেড লাইট বেশ ভালো কাজ করে।
আপনার ফ্রিজ ভালো রাখার আরো কিছু পরামর্শ :
ফ্রিজের পিছনটা পরিষ্কার করুন:কিছুদিন বাদে বাদে ফ্রিজের পিছনের বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতিতে জমে থাকা ধুলো পরিষ্কার করে নিন। তবে পরিষ্কার করার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ বন্ধ করে নেবেন।
ফ্রিজ ফাঁকা রাখবেন না:ফ্রিজ কখনওই ফাঁকা রাখবেন না। কারণ যখনই ফ্রিজের দরজা খুলবেন বাইরের গরম হাওয়া ভিতরে ঢুকে ফ্রিজের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। সবসময় রান্না ঢাকা দিয়ে রাখবেন।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট আপনার ফ্রীজ বন্ধু রাখুন। পাতিলেবু রাখুন:একটানা ফ্রিজ ব্যবহার করতে করতে ফ্রিজ থেকে গন্ধ বেরোয়। তাই গন্ধ আটকাতে ফ্রিজের মধ্যে কয়েকটা পাতিলেবু রেখে দিন। এতে বাজে দুর্গন্ধ দুর হবে।
ভালো থাকবেন ।আপনার এবং আপনার পরিবারের যত্ন নিবেন।আশেপাশের সবার খেয়াল রাখবেন।ধন্যবাদ। ভালো লাগলে শোষাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন।
তথ্যসুত্র: