বাংলাদেশের ভেতর এবং দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর বৈধ এবং অবৈধ দুটো ক্ষেত্রেই নাম কুড়িয়েছে বিকাশ। এর মূল কারণ হলো, কোনও রকম সঠিক পরিচয় এবং একাউন্ট খোলা ছাড়াই যেকেউ (এমনকি জঙ্গীরাও) অন্য আরেকজনকে টাকা পাঠাতে পারে। মানি-লন্ডারিং-এর জন্য তো বিকাশ অন্যতম। বিকাশের মাধ্যমে কত মানুষের টাকা যে জলে গেছে তারও শেষ নেই। দিন দিন নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ বের করছে। নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ভাষাচিত্র প্রকাশনীর সিইও খন্দকার সোহেল তেমনিই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি তার ফেসবুকে লিখেন,
‘শেষ পর্যন্ত আমিই প্রতারণার শিকার হইয়া গেলাম বিকাশ ব্যবহার করে। সাধারণত ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারকারীগণই এই প্রতারণার শিকার হইতেছেন। প্রতারক চক্রের ফাঁদ হইতে তাই সাবধান।’
ঘটনার বিস্তারিত (ভুক্তভোগীর নিজস্ব ভাষায়):
এক সাংবাদিক ছোট ভাই দৈনিক বাংলা মোড় থেকে আমার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টে কিছু টাকা পাঠায়। এর 2-3 ঘণ্টা পর 01948372888 এই নাম্বার থেকে খুবই চিকন স্বরের এক ব্যক্তি ফোন করলো আমায়।
– ভাই আপনার নাম্বারে আমরা … এত হাজার এত টাকা পাঠিয়েছি। টাকা কি পেয়েছেন ভাইজান?
– বললাম, হ্যাঁ পেয়েছি।
– ভাই ঘটনা হইলো কি, আমার ছোট ভাই ভুল করে আপনার এই নাম্বারেই আরও কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। দয়া করে আমাদের টাকাটা আপনি আমাদের পাঠিয়ে দেন।
– বললাম, কই কোনো মেসেজ তো আসে নাই?
– ভাই একটু ভালো করে চেক করেন। আমি আবার ফোন দিচ্ছি।
ফোন কাটতেই দেখলাম মোবাইলে একটা মেসেজ। আইডি নাম হলো bKesh. মোবাইল নাম্বার হলো 01799804050. সঙ্গে টাকার এমাউন্ট। এবং আমার টোটাল ব্যালেন্স। আমার আগের ব্যালেন্সসহ টোটাল ব্যালেন্স। রোজা রমজানের দিন এই ঘটনা দেখে মনটা নরম হয়ে গেল। ভাবলাম, আহা বেচারি কি বিপদেই তাহলে পড়লো। তৎক্ষণাৎ 01948372888 এই নাম্বার থেকে আবার ফোন।
– ভাই মেসেজ আসছে।
– বললাম, হ্যাঁ ভাই আসছে।
– ভাই, খুব বিপদে পড়ে গেছি। তাড়াতাড়ি ভাই আমি একটা নাম্বার দিচ্ছি। আমার নাম্বারে টাকাটা একটু সেন্ড মানি করে দেন ভাই।
– দিলদরিয়া মানুষ আমি দেরি না করে তার পাঠানো 01790916190 নাম্বারে তার পাঠানো টাকা সেন্ড মানি করিয়া দিলাম। ভাবখানা এমন, রোজা রমজানের দিনে একজন মানুষকে সহযোগিতা করে পূন্যি কামাইলাম।
কিন্তু আসল ঘটনা টের পাইলাম, যখন আমি আমার একাউন্ট থেকে টাকা উঠাতে গেলাম। দেখি অ মা আ আমার একাউন্ট ফাঁকা।
তখন গবেষণা শুরু করলাম। গবেষণা করে টের পাইলাম যেই আইডি থেকে টাকা আসছে সেটা হলো bKesh. কিন্তু বিকাশের আইডি হলো bKash. জাস্ট a এর বদলে e.
প্রতারক বেটার নরম আর মিষ্টি গলার স্বর শুনে এইটা খেয়ালই করা হয়নি।
দ্বিতীয় ভুল হলো, শয়তানটাকে টাকা পাঠানোর আগে আমার ব্যালেন্স চেক করা হয়নি। জাস্ট তার মেসেজ দেখেই আমি তাকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি।
সবকথার শেষ কথা হলো প্রতারণায় ব্যবহৃত সবগুলো মোবাইল নাম্বারই এখনো একটিভ। আমি ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
– ভাই টাকা কয়টা ফেরত দিবেন?
– নরম কণ্ঠের অসভ্য বলল, নাহ্। দিমুনা। পারলে কিছু করেন।
ছোট হোক বড় হোক প্রতারণাটি কিন্তু অভিনব। তাই এখনই প্রতিকার দরকার।
you can enter this link